একাদশ শতাব্দির দিকে আরবের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আল হাসান ইবন আল
হাইতাম প্রথম ক্যামেরার তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। যদিও তার ক্যামেরা ছবি তোলার জন্য
ব্যবহার হয়নি, বরং সূর্যগ্রহণ দেখার কাজের জন্য ব্যবহার করা হয় । মূলত এই
ক্যামেরার মৌলিক টেকনিক দ্বারাই ছবি তলার ক্যামেরার সূত্রপাত হয়। আল হাসান ইবন আল হাইতামকে ফাদার অব অপটিকস বলা হয় ।
১৫শ শতাব্দীতে পিনহোল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা হত, তখন লেন্সের কোন
ব্যবহার ছিলনা। কিন্তু ১৫৫০ সালে জিরোলামো কারদামো প্রথম লেন্স ক্যামেরা ব্যবহার
করে অধিকতর শার্প ছবির সূচনা করেন ।
তখনকার ক্যামেরায় যখন ছবি তলা হত তখন ক্যামেরার ভেতরে আলো এবং
ছায়ার ইমেজ তৈরি হত আর এই ইমেজকে ফটোসেন্সেটিভ রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা স্থায়ী রূপ
দেয়া যায় কিনা সে সম্পর্কে বছরের পর বছর গবেষণা চলতে থাকে ।
১৮২৬ সালে ফ্রান্সের বিজ্ঞানী
জোসেফ নিসফোর নিপে এমন একটি ফটোসেন্সেটিভ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার আবিষ্কার
করেন যা দ্বারা পরবর্তীতে আলোতে নষ্ট হয় না, এমন ছবি তৈরি করা সম্ভব হয় । কিন্তু এই
পদার্থের উপর ছবি তৈরি করার জন্য প্রায় আট ঘন্টা ধরে এক্সপোজ করার প্রয়োজন হত । অর্থাৎ
এ দিয়ে নড়ে-চড়ে এমন বিষয় বস্তুর ছবি তোলা সম্ভব হত না ।
![]() |
ছবি : সংগৃহীত
এটি বিশ্বের প্রথম ফটোগ্রাফ যা নেয়া হয়েছিল ১৮২৭ জোসেফ নিসফোর নিপের ঘরের ভিউ থেকে । তখন ফটোগ্রাফ না বলে এর নাম দেয়া হয়ে ছিল হেলিওগ্রাফ ।
|
১৮৩৭
সালে লুই জ্যাকুয়ে দ্যাগোয়ে (ফ্রান্স) সিলভার আয়োডাইড ব্যবহার করে ৫ থেকে ৪০ মিনিট
সময় ধরে এক্সপোজার এ ছবি তোলা সম্ভব করেন।
১৮৩৯
সালে লুই জ্যাকুয়ে দ্যাগোয়ে (ফ্রান্স) এবং উইলিয়াম হেনরি (ইংল্যান্ড)
স্বাধীনভাবে ফটোগ্রাফি শব্দটি ব্যবহার করেন। গ্রীক শব্দ ‘’ফটোজ’’
এবং ‘গ্রাফোজ’ থেকে ফটোগ্রাফি শব্দটি চলে আসে। ফটোজ অর্থ ‘আলো’
এবং গ্রাফোজ অর্থ ‘আঁকা’ এই শব্দ দুটিকেই মিলিয়ে ফটোগ্রাফ শব্দটির উৎপত্তি।
মূলত
এ পর্যন্ত ছবি তৈরি করা হত ধাতব পদার্থের উপর, পরবর্তীতে কাগজের উপর ছবি করা যায়
কি না তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ইংল্যান্ডের উইলিয়াম হেনরি ফক্স এবং তিনি কাগজের
নেগেটিভ এবং তা থেকে কাগজের পজিটিভ ছবি তৈরী করতে সমর্থ হন।
১৮৩৯
সালের ১৯শে আগস্ট অ্যারাগো আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রান্স সরকারের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি
বিভাগের কাছে দ্যাগোয়ের কতৃক সেই সময়ের ফটগ্রাফিক টেকনোলজি ব্যাখ্যা করেন। ফ্রান্স
সরকার এই প্রযুক্তির কপিরাইট ক্রয় করেন এবং সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য এই
প্রযুক্তিকে উন্মুক্ত করেন। এটাই ছিল একটি সরকার এবং পৃথিবীর মানুষের কাছে
ফটোগ্রাফির প্রযুক্তির প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এই দিনটিকে World
Photographic Day বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস হিসেবে পালন করে আসা হচ্ছে।
১৮৭৮ সালে
চার্লস বেনেট জিলেটিনের সাহায্যে ফিল্ম তৈরি করেন। এই ফিল্মে এক সেকেন্ডের পঁচিশ ভাগের
এক ভাগ সময়ে ছবি তোলা সম্ভব হয়। ১৮৮৮
সালে অ্যামেরিকার জর্জ ইস্টম্যান প্রথম কোডাক ক্যামেরার প্রচলন করেন। তখনই
সেলুলয়েডের ওপর ফিল্ম তৈরি শুরু হয়।
ডিজিটাল
ফটোগ্রাফির উত্থান
১৯৬৯
সালের অক্টবর মাসে বেল ল্যাবে জর্জ স্মিথ এবং উইলার্ড বয়েল যুক্তভাবে চার্জড কাপল
ডিভাইস (CCD) এক ধরনের ইমেজ সেন্সর আবিষ্কার করেন। ১৯৭০ সালে স্মিথ
এবং বয়েল সিসিডিকে প্রথম সলিড স্টেট ভিডিও ক্যামেরায় ব্যবহার করেন।
১৯৮৬
সালে কোডাক এর বিজ্ঞানীরা একটি ইমেজ সেন্সর তৈরি করতে সমর্থ হন, যা ১.৪
মেগাপিক্সেল ছবি দিতে পারে। এ থেকে ৫x৭ ইঞ্চি ভাল মানের প্রিন্ট দেয়া সম্ভভ
হত। ১৯৮৭ সালে কোডাক স্টিল ভিডিও ইমেজ রেকর্ড , স্টোর, ম্যানিপিউলেট, ট্রান্সমিট
এবং প্রিন্ট করার জন্য সাত ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র বাজারে ছাড়েন।
১৯৯১
সালে কোডাক নাইকন f3 ক্যামেরায় ১.৩ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর
বসিয়ে ফটোজারনালিস্টদের উপযোগী করে প্রফেশনাল ডিজিটাল ক্যামেরা সিস্টেম (dcs) বাজারে
ছাড়েন।
বাংলাদেশে
ফটোগ্রাফি
জনাব
মঞ্জুর আলম বেগ ১৯৬০ সালে বেগার্ট ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি এবিং ১৯৭৬ সালে
বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (BPS) প্রতিষ্ঠা করেন। ফটোগ্রাফির শিক্ষা
বিস্তার এবং ফটোগ্রাফারদের সংগঠিত করার ব্যাপারে অসামান্য ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের
আলোকচিত্রীগণ তাকে আলোকচিত্রাচার্য উপাধিতে ভূষিত করেন।
১৯৬৪
সালে সমাজকল্যাণ দফতর ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার বোর্ডের আওতায় পুরান ঢাকার আরমানিটোলায়
ফটোগ্রাফিক ট্রেনিং সেন্টার চালু করা হয়। বিশিষ্ট ফটো সাংবাদিক গলাম মাওলা এখানে
শিক্ষকতা করতেন।
জনাব মঞ্জুর আলম
বেগ এর তোলা ছবি।
ছবি : গোলাম কাশেম ড্যাডি
ছবি : রশিদ তালুকদার
ছবি : বিজন সরকার।
0 মন্তব্য:
Post a Comment