Tuesday, February 27, 2018

লালসালু - শেকড় থেকে শিখরে



সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ  বাংলা সাহিত্যে বিরলপ্রজ ও স্তম্ভ প্রতীম অত্যাধুনিক কথাশিল্পী । যিনি আপন নিষ্ঠ ও মনস্বতায়  স্বতন্ত্র শুদ্ব আধুনিক  সাহিত্যিক । সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ  এবং তাঁর ‘লালসুাল ’ (১৯৪৮ ) উপন্যাস আমাদের অবচেতনে আমাদের নাড়া দেয় । আমাদের নিয়ে যায় আমাদের জীবনের গভীরে । যুগ দ্বৈরথে জটিল চেতনা  প্রবাহী প্রকরণিক উৎকর্ষতা ও কাল চৈতন্যানুগ  বিষয়বস্তুর  ঋদ্ধতার গুণে ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যে চর্চায় আমাদের চিন্তা –মনোরাজ্য আতœা হয়ে উঠতে পারে ক্রামশ জাগ্রত ।
ইংরেজি অনুবাদে উপন্যাসটি “Ttee without roots” (শেকড়হীন বৃক্ষ)  নামে ‘লালসালু ’  বিখ্যাত ।

নির্দিষ্ট ভূ- খন্ডের আর্থ -সামাজিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে যে জীবন প্রবহমান তার  স্বরুপ আত্মস্থ করে তাকে  অনিবার্য শিল্পের আঙ্গিকে উপস্থাপন করার মধ্যেই  একজন শ্রেষ্ঠ উপন্যাসিকের শ্রেষ্ঠত্ব পুরোপুরি নির্ভর করে।

‘লালসালু  ’ উপন্যাসের উপকরণ হিসেবে বেছে  নিয়েছেন  শর্তবন্দী সমাজ ব্যবস্থায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা অসহায়  পশ্চাৎপদ গ্রামীণ জীবনের নিরুপায় ও বিপন্ন সত্ত্বারই করুণ কাহিনি ।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের  অব্যবহিত কাল পূর্বে উপন্যাসের কাহিনি যেখানে  ছিল অনির্বায ভাবে নগরকেন্দ্রিক ঠিক সেই সময় আমরা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অসীম দৃঢ়তা এবং সাহসীকতার পরিচয়  পাই তাঁর  ‘লালসালু ’ উপন্যাসে একটি অখ্যাত গ্রামের চিত্র অংকনের মধ্যে দিয়ে ‘লালসালু ’ উপন্যাস  আমাদের  সমাজ বাস্তবতাকে স্পর্শ করে । এদেশের ধর্মব্যবসায়ীর, পীর দরবেশ ,খাদেমদের চারিত্রিক অসংগতি , তাদের উপভৌগিক মানসিকতা , বহুবিবাহ প্রথা , ধর্মের নামে কুসংস্কার এমন অসংখ্য সামাজিক অনাচারকে, জীবনের রক্তিম সালু কাপড়ে  আবৃত স্থবির পচা ঘুণেধরা অনালোকিত সমাজের দ্যোতককে শিল্পী বিশেষ যতেœ ও সচেতনায় প্রোথিত করেছেন  তাঁর ‘লালসালু ’ র জমিনে ।

‘ লালসালু ’ উপন্যাস আমাদের  অস্তিত্ব ও অস্তিত্ববাদিতার কথা বলে । একদিকে  কুসংস্কারে আচ্ছন্ন  ধর্মভীরু দরিদ্র অসহায় গ্রামবাসী অন্যদিকে ধূর্ত  , প্রতারক র্ধম ব্যবসায়ী ও শোষক ভূ-স্বামী । মূল  বিষয়  হিসেবে উপন্যাসে উঠে এসেছে হাজার বছর ধরে চলা শিখর গাড়া কুসংস্কার । সুস্থ  স্বাভাবিক  জীবনাকাক্সক্ষার সাথে দ্বদ্ব চলেছে অন্ধবিশাস ও ভয় ভীতির ।

‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ একদা মতি গঞ্জের সড়ক বেয়ে মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করে । নিছক জৈবের তাগিদেই বিভগ্ন  বিস্মৃতি প্রাচীন এক  কররকে ‘মোদাচ্ছের পীরের কবর’ বলে ঘোষণা করে সহজ সরল গ্রামবাসীদের যুগপৎ চকিত  ও ভীতির কারণ করে তোলে আশেপাশের সকল গ্রামের মানুষের মমর্ন্তুদ কান্না , অশ্রæসজল কৃতজ্ঞতা , আশা ও ব্যর্থতার ইাতহাস ব্যক্ত হতে থাকে  ‘লালসালু’ দিয়ে ঢাকা কবরের কাছে । সাথে আসতে  থাকে ঝকঝকে পয়সা । ক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠাকে জীবন্ত রাখার  অটুট হাতিয়ার হয়ে ওঠে সালু কাপড়ে আবৃত মাছের  পিঠের  মতো ‘মোদাচ্ছের পীরের কবর । সামগ্রিকভাবে মজিদ হয়ে ওঠে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ।

অনুবর্র নোয়াখালী  অ ল জনবাহুল্যের চেয়ে উৎপাদিত শস্যোর পরিমাণ, অনাবৃষ্টি  অতিবৃষ্টিতে ফসল ধবংস হয়ে যায় । মবার দেশে সর্বত্র যেন রুক্ষতা , ঘর গুলো  যেন খাদ্যশস্য । তাই এখানে ক্ষুধার বিকল্পে ধর্মের অবস্থান । জীবিকার জন্য  এরা দেশ ত্যাগকরে আর  মূলধন হিসেব এরা অর্জন করে ধর্মীয় জ্ঞান ।

ন্যাংটা ছেলেও সিপারা পড়ে , গোঁফ ওঠার আগেই কোরানে হাফেজ  হয়ে ওঠে । কিন্তু তারা খোদার এলেম অর্জন করলেও , মাথায়  সারাক্ষণ টুপি পরলেও  খোদার প্রতি তাদের কোন আস্থা বা বিশ্বাস নেই । কারণ তাদের  পেটে অন্ন নেই । বাস্তবের  এই অপৃর্ণনতা ও অপ্রাপ্তির  বেদনা ভুলতে ধর্মের মোহন জগতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। ধর্মের পাঠ গ্রহণ করে খোদার নেক  বান্দা হবার প্রাণান্তর চেষ্টা করে কিন্তু অন্তরে জীবিকার সর্বৈব চিন্তা ,ছলাকলা ,  ফন্দি ফিকির  এবং  কৌশল অবলম্বন করে । খোদাভক্তি তাদের পেটের  জ্বালা নিবারণ করতে পারেনা তাই তাদের  মনের  শন্তি আসেনা । তাই তারা ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের বদলে  আশ্রয়  করে ফাঁক ফাঁকির। এরই প্রেক্ষিতে  শস্যের চেয়ে টুপিধারীর সংখ্যাই বেশি ।সে টুপি খোলস মাত্র ,শুদ্ধ ধর্মবিশ্বাসে স্থিত নয় ।

তাই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ  তাঁর ‘লালসালু ’ উপন্যাসে চরম সত্য ও বাস্তব কথাই উচ্চারণ করেছেন Ñ
“শস্যের চেয়ে  টুপি বেশি , ধর্মের আগাছা বেশি ।

কেবলই কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাস । ফল ¯^রুন  ভীতি আর আত্মসমপর্ণ । অসহায়  গ্রামবাসীদের  প্রতারিত করে জমিদখল ,রহিমা ও জমিলাকে বিয়ে করা , নিজে ধর্মের প্রতি নিষ্ঠ না হয়ে  গ্রামবাসীদের  চিত্তে  কৌশলে ধর্মভাব  জাগিয়ে তাদের শাসন  ও শোষণ বিশেষ আর্থ -সামাজিক  কাঠামো ও অনিবার্য  দেশ কাল সংলগ্ন । শিল্পী এমনই এক সমাজের প্রতি আমাদের অঙ্গুলী  নির্দেশ করে দেখিয়েছেন  যেখানে ইতিবাচক বোধগুলো , সুন্দর , কল্যাণ অদৃশ্য সালু ঘেরা  কবরের শাসনে গ্রাসিত হয়ে হজম হয়ে যায় । গ্রামবাসী  প্রতিবাদহীন । রক্ত তাদের হীম শীতল ঠান্ডা , শত শোষণে ও যেন তাদের কোন রা নেই। সামন্তবাদী সমাজ শৃক্সখলে  বন্দী এই সব মানুষ গুলোর যন্ত্রণাকে আত্মস্থ করে শিল্পী উপন্যাসে প্রোথিত করেছেন ।

উপন্যাসের ধারাবাহিক  ঘটনাবিন্যাস , প্রবাহ মানতা এবং  প্রধান চরিত্রের মধ্যে  অন্তর্দ্বন্ধ ও মনস্তাওি¦  বিচারে পুরো উপন্যাসকে তিনটি স্তরে সাজানো  যায় Ñ

ক) উপন্যাসের শুরু থেকে মজিদের মহব্বত  নগর গ্রামে প্রবেশ পর্যন্ত ।
খ) মহব্বত নগর  গ্রামে  প্রবেশ করে জমিলাকে বিয়ে  পর্যন্ত 
গ) মজিদের ঘরে  জামিলার আগমন থেকে উপন্যাসের শেষ  পর্যন্ত ।

“বাইরে কুয়াশাচ্ছন্ন  রহস্যময় জ্যোৎ¯œা। তার আলোয়  ঘরের কুপিটার শিখা মনে হয় একবিন্দু রক্ত টাটকা, লাল টক্টকে। খোলা দরজা  দিয়ে  কুয়াশাচ্ছন্ন ¤œান জ্যোৎ¯œার পানেই চেয়ে থাকে   মজিদ , দৃষ্টিতে মানুষের  জীবনের  ব্যর্থতার বোঝা ।”

উপন্যাসিক মজিদ  চরিত্রের মনোজাগতিক  চেতনা সৃষ্টিতে বিভিন্ন  ধরনের  সংকেত ও প্রতীককে সৃষ্টি করেছেন । শেষ পর্যন্ত শিকড়ায়িত মজিদ তার অস্তিত্ব বিষয়ক সংকটে  দিশেহারা  হয়েছে  এবং শক্তিধর মজিদরুপ বিষবৃক্ষের সমূলে উৎপাটন  করে শিল্পী সমাজে শুভ শক্তির উদবোধন ঘোষণা  করেছেন । যায় ফল  স্বরুপ আমরা অজন্ম  বিল্পবী  জমিলা চরিত্র পেয়ে  যাই । মজিদের গায়ে থুথু দেয়া, মাজারে পা দিয়ে প্রকাশিত বিদ্রোহ - এগুলো সচেতন শিল্পীর চেতনা প্রবাহে ফলিত বাস্তবতা ।

আমাদের  অন্ধকারময় সমাজে মাঝে মাঝে আলোকময়  সওা উঁকি দেয় । ঠ্যাটা বুড়ো মজিদের ক্ষমতাকে তোয়াক্কা করেনা । কারণ সে সত্যানু সন্ধানী ।  শিক্ষিত যুবক মুক্ত মনের  অধিকারী আক্কাস কুসংস্কারকে দূর করে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায় ।
‘ যেখানে শিক্ষা সেখানেই আলো ’ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত আক্কাসের ভেতরের আলো জ্বলতে না জ্বলতেই শোষকের বলে নিভে যায় কিন্তু নিঃশেষিত হয়না । কারণ সমাজ বেঁচে থাকে আলোর প্রত্যাশীদের প্রত্যাশায় ।  জীবন শেষ হয়ে যায় কিন্তু জিজ্ঞাসা  শেষ হয় না । বিল্পবী  হারিয়ে যায় , কিন্তু বিপ্লব কখনো  মরেনা । জমিলা ঠ্যাটা বুড়ো , আক্কাস তাই কখনো মরেনা । মানুষের তৈরি অন্ধ সংস্কারের সাথে সরল মুক্ত বুদ্ধিব সংঘাত । সংঘাত প্রথাধর্মের সাথে অন্তরধর্মের । প্রতিবাদী হারায় , প্রতিবাদের স্পৃহা হারায়না ।

জমিলা বেদনার প্রতীক , তাই সে বিদ্রোহের প্রতীক । এক সত্যসন্ধানী ব্যক্তিসওা । সে ধর্মাশ্রয়ী  স্বৈর সমাজকে বিদ্রপ করে । সে নিঃসঙ্গ হলেও স্বাধীন । যে শেকড়হীন বৃক্ষ মানুষের শোষণের অস্ত্র, তা উৎপাটনের দায়িত্ববোধ ,সৎ ,মুক্ত ও নিঃশঙ্ক চিত্তের কারণে উড়রহম ও  ঝঁভভবৎরহম               এরদায়ে জমিলার সক্রিয়তা , মানবতা , জীবনমুখীনতা , অস্তিত্বরক্ষার চৈতন্য সংক্রমিত হয়েছে  অন্যসব মানুষের প্রতিনিধি রহিমাতে  । তাই রহিমার দৃঢ় উচ্ছারণ - “ধান দিয়া  কী হইব ,  মানুষের জান যদি না বাঁচে  ।”

মহব্বতনগর গ্রামে অশিতিপর খিটখিটে খ্যাংটা বুড়ি মজিদকে তোয়াক্কা না করে  তার শেষ সম্বল মাজারে  ছুঁড়ে মেরে পীরবাদের বিরুদ্ধে বিশেষ মাত্রার প্রতিবাদ  জানিয়েছে ।

তাহের কাদেরের বাপ উজ্জ্বল , সোচ্চার ও প্রতিবাদী  । শক্তিমান  মজিদের নির্দেশে মেয়ের কাছে মাফ চাওয়ার  কারণে ক্ষোভে দুঃখে অপমানে গ্রাম  ত্যাগ করেছে ।‘ লালসালু’  উপন্যাসের শক্তিধর মজিদের বিরুদ্বে প্রথম প্রতিবাদী চরিত্র  । সে জমিলার পূর্বসূরী। 

মজিদেরসমগোত্রীয় আওয়াল পুরের পীর শিকড়গাড়া মজিদের কাছে সে যেন ভ্রাম্যমাণ  । তার আত্ম প্রতিষ্ঠা মানে মজিদের সাথে অনিবার্য  সংঘাত । তাই সে ক্ষীণ কন্ঠ।

মতলুব মিয়া আমাদের সমাজের অনালোকিত সমাজসংলগ্ন  চরিত্র । ধর্মাপ্লুত গ্রামীণ ব্যক্তি ।  দুদু মিয়া প্রতিবাদহীন আদিম সারল্যের প্রতীক । খালেক ব্যাপারীর শ্যালক ধলামিয়া  কুসংস্কারাচ্ছন্ন  জীবন প্রবাহেরই দ্যোতক ।

বিওশালী খালেক ব্যাপারীর প্রথমা  স্ত্রী আমেনা বিবি । সে ঈর্ষাপরায়ন  মজিদের  ধর্মান্ধ্তারবলী  হয়ে  দীর্ঘ তের বছরের দাম্পত্যজীবন ছেড়ে চলে যায়  বাপের  বাড়ি । অসম সমাজ ব্যবস্থার কপট ধর্মাচারের শিকার আমেনা বিবি এক বেদনাদীন চরিত্র । মজিদ শেকড়হীন বৃক্ষ। অথচ সে  যেন তার সর্বশক্তি  দিয়ে  শুষে নিতে চাইছে আলোকিত সূর্য ।সবুজ জীবন ।  ‘লালসালু ’ উপন্যাসের মজিদ সর্বৈব প্রধান । তাই সে লেখকের সিসৃক্ষার শ্রেষ্ঠ ফসল । মজিদ চরিত্রকে পূর্ণতা দান করতে তাই প্রতিবাদী , প্রতিবাদহীন  অসংখ্য চরিত্রের অবতারণা করেছেন  লেখক ।

১। বিশ্বাসের পাথরেযেন খোদাই সে চোখ ।
২। দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা । সময় অসময়ে মিথ্যে কথা না বললে নয় ।

সংগ্রাম মুখর জীবনে আস্তিত্ববাদীতার শ্রেষ্ট উদাহরণ  মজিদ চরিত্র , তার এমন অসংখ্য উচ্চারণ এবং ‘ লালসালু ’ উপন্যাস । জীবনের উপর প্রবল  বিশ্বাসী মজিদের একসময়  প্রকৃতি  ও নারী দুই হারিয়েছে তথাপি  মজিদ  তার সাংঘাতিক খেলা থেকে দমেনি । চোখে তার পাথুরে বিশ্বাস , সব হারিয়েও সে নতুন করে জীবন গড়ার প্রত্যয়ে উদীপ্ত । পরাজয়ের গ্লানী নিয়েও মজিদ অন্ধকারে আলো  দেখে, জীবনকে সর্বাংশে ধরে রেখেছে । মজিদের অস্তিত্ববাদীতা , তার সংগ্রামশীলতা , জীবন মুখীনতা অসাধারণ , অদ্ভ’ত  সুন্দর এবং বিশ্বাস যোগ্য Ñ / পৃথিবীর প্রতি তথা জীবনের প্রতি মজিদের এই বিশ্বস্ততা যেমন মানবিক , তেমনি আধুনিক । মানুষের জীবন যাত্রা ও অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য সংগ্রামী  জীবনের চরিত্র মজিদ।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার কুসংস্কার ধর্ম ব্যবসার শেকড়   উন্মোচনে বেঁচে থাকার সুতীব্র বাসনার এবং নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার  মজিদ চরিত্র সৃষ্টিতে । দ্বদ্ব সংকুল পৃথিবীতে মানবতার অবমাননার  বিরুদ্ধে রহীমারসোচ্চার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে । সর্বোপরী সমস্ত অন্ধকার শেষে আলোকিত সূর্যদয়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ শিল্প সফল , সার্থক এবং  আশাবাদী ।

 অস্তিত্ববাদী দর্শনের সারকথা  সবার উপরে মানুষ সত্য‘ লালসালু’ উপন্যাসের ও চুড়ান্ত সত্য ও মূল কথা হিসেবে উঠে এসেছে আক্কাস , ঠ্যাটা বুড়ো  সহ বেশ কয়েকটি প্রতিবাদী চরিত্র ।  

অসীম আকাশের সীমাহীন নীল আস্তরণ যেমন পৃথিবীকে করে শুভ্র তেমনি রুচিশীল  , মননশীল।  সুশিক্ষিত যুবক আক্কাসের দৃঢ় প্রত্যয় সমাজ থেকে সকল জঞ্জাল সরিয়ে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার সংগ্রামে উপন্যাসিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেখিয়েছেন। তাই উপন্যাসিক তার ‘লালসালু ’ উপন্যাসে আক্কাস চরিত্র সৃষ্টি করে আমাদের  জীবনের শ্রেষ্ঠ বাণী শুনিয়েছেন ।

জীবনের দৃষ্টি পিছনের দিকে নয় , সামনের দিকেচলা ।
‘লালসালু’ উপন্যাসের ভাষার কারুকার্য  ও ঐশ্বর্য অনুধাবনে শিল্পীর বিশেযত্ব অসাধারণ ।
‘লালসালু ’ উপন্যাসে তিন ধরনের ভাষা পাওয়া যায়  
ক) প্রমিত বাংলা ভাষা
খ) মজিদের বৃত্তিক ভাষা
গ) অন্যান্য চরিত্রের উপভাষিক ভাষা ।




শিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ জীবনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে, সূক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করেছেন । সমাজকে এফোঁড় ও এফোঁড় করেছেন তাঁর চুলচেরা বিশ্লেষণে । ধীশক্তির মানসপুত্র শিল্পীর রক্তক্ষরণ হয়েছে সমাজের শোষণ এবং অরাজকতায় । তাই তিনি আমাদের সমাজের  চেহারাকে তুলে ধরতে প্রয়াস পেয়েছেন  তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে । সমাজের কালিমাকে ,পীরবাদকে শিল্পী তাঁর লেখনীতে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত শিল্প সফল ভাবে । শিল্পী মুক্তিকামী সমাজের, মুক্তিকামী মানুষের আলোকিত দিনের প্রত্যাশায় ঘোষণা করেছেন দৃঢ় উচ্চারণে -

“সবার উপরে মানুষ সত্য ,তাহার উপরে নাই ।”
                                                                ধন্যবাদ

সহায়ক বই- নবদূত / মোঃ দেদারুল আলম মুরাদ

শিক্ষিকা 
অনন্যা গুপ্তা 
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সৈয়দপুর

0 মন্তব্য: