• সানগ্লাস - ফ্যাসনের সাথে হবে রোগ প্রতিরোধ

    সানগ্লাস কেন পড়বেন এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকের চিন্তায় প্রথমে আসে ফ্যাশন। অবশ্যই সানগ্লাস ফ্যাশনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে। বলা যেতে পারে সানগ্লাস পৃথিবীর সকল দেশে ও সমাজে “কমন ফ্যাশন” হিসেবে গণ্য করা হয়....

  • ফটোগ্রাফির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

    একাদশ শতাব্দির দিকে আরবের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আল হাসান ইবন আল হাইতাম প্রথম ক্যামেরার তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। যদিও তার ক্যামেরা ছবি তোলার জন্য ব্যবহার হয়নি, বরং সূর্যগ্রহণ দেখার কাজের জন্য ব্যবহার ক টেকনিক দ্বারাই ছবি তলার ক্যামেরার সূত্রপাত হয়।

  • কেমন ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র

    একটা সময় ছিল যখন পত্রিকার পাতা খুললে নতুন সিনেমার বিজ্ঞাপন পাওয়া যেত।কোন্ পেক্ষাগৃহে কোন্ চলচ্চিত্রটি চলছে, কত সপ্তাহ ধরে চলছে এই বিষয় গুলো জানার কৌতুহল সমাজের সব শ্রেণীর পেশাজীবি মানুষের ছিল। োর তি ছিল প্রচুর। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা শেষ

  • জু কিপার/ মাশুদুল হক

    সন্ধ্যার দিকে একটু বেড়িয়েছিলাম, টুকটাক কেনাকাটার কাজ ছিল। বাইরে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। সঙ্গের ছাতাটা পুরনো, দেখতে কিম্ভুতকিমাকার।

  • আরো তিনবার ব্যালন জিততে চান রোনাল্ডো

    একজন । ফুটবলার হিসেবে যা যা অর্জন করা সম্ভব তার সবটাই অর্জন করেছেন তিনি । পাঁচটি ব্যালন ডি অর, দুটি ফিফা দ্য বেস্ট সহ ব্যাক্তিগত অনেক পুরুষ্কার জিতেছেন। দলীয় অর্জনে দুটি ক্লাবের হয়ে জিতেছেন ইউরোপিয়ন চ্যাম্পিয়নস্ লীগ। জিতেছেন ক্লাব বিশ্বকাপ, লা লীগা ও ম্যানচেস্টারের হয়ে জিতেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ। কোন ফুটবলার তার ক্যারিয়ারের এত কিছুর প্রাপ্তি স্বপ্নেও দেখে না কিন্তু

Tuesday, February 27, 2018

সানগ্লাস - ফ্যাশনের সাথে হবে রোগ প্রতিরোধ ।




     

সানগ্লাস কেন পড়বেন এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকের চিন্তায় প্রথমে আসে ফ্যাশন। অবশ্যই সানগ্লাস ফ্যাশনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে। বলা যেতে পারে সানগ্লাস পৃথিবীর সকল দেশে ও সমাজে কমন ফ্যাশনহিসেবে গণ্য করা হয়। তবে ফ্যাশনের চাইতে এর স্বাস্থ্যগত দিকটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাসন ছাড়াও পাঁচটি কারণে আমাদের সানগ্লাস ব্যাবহার করা উচিত।


১। অতি বেগুনী রশ্মি থেকে চোখের সুরক্ষা ।
সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির কারণে চোখে ছানি পড়া রোগ হতে পারে। তাছাড়াও “ফটোকেরাটাইটিস” নামে এক ধরণের রোগ হয় যাকে “স্নো ব্লাইডনেস” ও বলা হয়। প্রখর রোদে খালি চোখে কয়েক ঘণ্টা কাজ করলে চোখের কর্নিয়া এবং কঞ্জাংটিভাতে সানবার্ন হয় । তখন চোখে ব্যাথা করে , চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরে । এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রখর রোদে চোখে প্রচন্ড জ্বালা পোড়া শুরু হয়। যদি কারো এই রোগ দেখা দেয় তখন শুধু সানগ্লাস ব্যবহার না করে গগলস ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয় । তাই যারা অনেকক্ষন রোদের মধ্যে থেকে কাজ করেন এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য হয়তো বড় টুপি বা হ্যাট পড়ে ক্ষতিকারক সূর্যের ৫০% অতিরিক্ত বেগুনী রশ্মির বিকিরণ থেকে চোখকে রক্ষা করবেন ভাবছেন কিন্তু তা যথার্থ নয়। তাদের জন্য সানগ্লাসই হচ্ছে সবচেয়ে উপযোগী ।


 ২। নীল রশ্মি থেকে চোখের সুরক্ষা
দীর্ঘকালীন সূর্যের অতি নীল ও বেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে আসার ফলে ম্যাকুলার ডিজেনারেশনএর আশংকা বেড়ে যায়। বিশেষ করে রোদে যাদের চোখ খুবই সংবেদনশীল তাদের অবশ্যই সানগ্লাস পরা উচিত।

৩। আরামদায়ক দৃষ্টির জন্য সানগ্লাস জরুরী
সূর্যের প্রখরতার কারণে কোন কিছু পরিস্কার করে দেখতে সমস্যা হয়। তখন আমরা আড়চোখে দেখি এবং চোখ ভিজে যায়। সানগ্লাস পরলে আমাদের এই সমস্যা থাকে না।  

৪। অন্ধকার মানিয়ে নিতে সমস্যা  
দুই থেকে তিন ঘন্টা প্রখর রোদে কাটানোর পরে রাতে অথবা ঘরের আলোর সাথে চোখকে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে সানগ্লাসের কোন বিকল্প নেই।

৫। ক্যানসার প্রতিরোধে সানগ্লাস ।
রোদের কারণে চোখের পাতা ও চোখের আশেপাশে ক্যানসার হতে পারে। তাই ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য সকলের সানগ্লাস পড়া উচিত।

ডাকাতিয়া ভয় / রাজীব চৌধুরী





 "আমি জানি এইঘরে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি একা এবং অবশিষ্ট আছি। জানিনা এর আগে কি হয়েছিল- কিনবা আমি জানাতে চাইনা। শুধু জানি আমি আজরাতে এই ঘরে একা এবং অবশিষ্ট মানুষ। শুয়ে আছি আমার খাটে। আমার পাশেই বিশাল দেয়াল। আমি রাতের অন্ধকারে দেয়ালের ঠান্ডা অস্তিত্ব টেরপাচ্ছি। টেরপাচ্ছি আমার পাশের মোলায়েম অথচ শক্ত কনক্রিট। সুতারাং আমার পেছন দিক থেকে কোন বিপদ আসার কোন সন্দেহ নেই যদিনা কেউ দেয়াল ভেঙ্গে এসে গায়ের উপর পড়ে। কিন্তু আমার সমস্যা অন্যখানে। এইমুহুর্তে আমার মনে হচ্ছে কেউ একজন কিনবা কিছু একটা আমার ঘরে আছে। আমি সেটাকে দেখতে পাচ্ছিনা। কিন্তু আমি টের পাচ্ছি। আমি ভীতু নই- তবে এখন ভয় পাচ্ছি। প্রচণ্ড ভয় ধীরে ধীরে গ্রাস করতে শুরু করেছে আমাকে। আমি জানিনা এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি - শুধু জানি এই ভয় থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে আমাকে। কানের পাশে ঝা ঝা করতে শুরু করেছে। শুনেছি শরীর অসুস্থ হয়ে গেলে কিনবা দুর্বল হয়ে গেলে এটা হয়। কিন্তু আমি তো দুর্বল নই- আমি সবল। গায়ে তাগড়া জোয়ানের শক্তি। নাইলে ওরা আমার সাথে পেরে উঠবেনা কেন? আমি তো ওদের কিছুই করিনি। ওরা আমার বিপক্ষে গেছিল- আমি ওদেরকে... । যাই হোক - এখন ব্যাপার হল আমার কানের পেছনে কেমন একটা চিনচিনে শব্দ হচ্ছে। শব্দটা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তে শুরু করেছে আমার মাথার ভেতর। চিনচিন করতে করতে শব্দটা মিনিট খানেকের মাঝেই এই কান থেকে ও কান ঘুরে আসল সতিনের ঘর বদলের মত। ও বলতে ভুলেই গেছি- আমি আরেকটা শব্দ শুনছি। সেটা হল একটা ক্যাও ক্যাও টাইপের শব্দ। এই শব্দের জনক কে আমি তা জানিনা। এটা চিনচিন শব্দের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। কেউ যেন বসে বসে কিছু একটা মন্ত্রের মত করে পড়ে চলেছে আমার বাম কানের পাশে। আমি বুঝতে পারছিনা একটা ফোঁটাও- শুধু বুঝতে পারছি -যেই হোক-সে প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে শক্তিশালী অবস্থানে চলে যেতে শুরু করেছে। আমি ওকে থামাতে পারছিনা। কানে হাত দিয়ে থেকেছি। শুধু মনে হচ্ছে আমার বিছানার নিচ থেকে কেউ একজন টানা কিছু একটা বলে চলেছে- আর আমি সেটাকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছি। আমার বিছানার নিচে কিছু নেই। একেবারেই ফকফকা। আমি জানি- এই ফকফকা থাকাটাই আমার জন্য কাল হল। এখানে এখন গেড়ে বসেছে কিছু একটা। কেউ একজন। তাকে লিঙ্গ বাচক শব্দে আটকানো গেলে মন্দ হোতনা। কিন্তু যাচ্ছেনা। অবশ্য তাকে একভাবে আটকানো যাচ্ছে। সেটা হল আমার খাটের সাথে দেয়ালের দূরত্ব এতই কম যে- সে কোন ভাবেই ওখান দিয়ে উঠে আসতে পারবেনা যদিনা সে রাবারের কিছু একটা হয়। আচ্ছা অশরীরির কি শরীর আছে? থাকলে কি রকম? জানিনা। মনে হচ্ছে ফেটে যাবে মাথাটা। উফফ- কি অদ্ভুত। শব্দটা বেড়েই চলেছে। এই সময় খুট করে শব্দ হল আমার ঘরের মাঝেই কোথাও। শব্দটা আমি শুনলাম। একেবারেই স্পষ্ট। এবং পরিষ্কার। এই শব্দ মানুষের পায়ের শব্দ। একেবারে নিঃশব্দে হাটার সময় মানুষের পা থেকে এই শব্দ তৈরি হয়। আমি জানি- কারণ ছোটবেলা আমি রান্না ঘর থেকে বৈয়াম নিয়ে আঁচার চুরি করে খাবার সময় আমার পা থেকে এই শব্দ হত। আর আমার মা এই শব্দ শুনেই জেগে উঠতেন। আমি এর পরেই বেধরক মার খেতাম। এই শব্দ আমার খুব পরিচিত। আমি জানি এটা পায়ের শব্দ। তার মানে কেউ একজন ঘরের মাঝে আছে। আমি জানি সে আছে। কিন্তু আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিনা। ও আচ্ছা আমি তো আবারো ভুল করলাম। আসলে আছে দুইজন। একজন আমার খাটের তলায়- আরেকজন আমার ঘরের অন্য কোনায়। আমি যেখানে শুয়ে আছি তার থেকে বেশ খানিকটা দূরে। ভয়ে আমার আত্মারাম খাচা থেকে উড়ে যাবার যোগার। আমি ভয়ের চোটে আমার পেছনের দেয়াল টা অনুভব করার চেষ্টা করলাম। আহ্‌ - শীতল- মোলায়েম - এবং দৃঢ় সে। আমার চাইতে অনেক বেশি দৃঢ়। আমার চাইতে অনেক বেশি মজবুত। আমার চাইতে অনেক বেশি বিশ্বস্থ। আমি তো আমার বন্ধু কেই... । সে যাই হোক- এখন ঐ সব কথা বলার সময় না। আমি এখন নিজেকে ঠিক রাখার দায়িত্ব নিয়েছি। আমাকে ঘুমাতে হবে। কারণ আজকের রাত না ঘুমালে আমি মরে যাব। টানা চার রাত আমি জেগে আছি এই ঘরের ভেতর। একেবারেই বন্দী দশা। বাইরে যাবার উপায় নেই। দশা। আকাশ দেখার উপায় নেই। নাহ- আমাকে কেউ বন্দী করে রাখেনি। আমি নিজেই যাইনি। আমার যেতে ভালো লাগেনা। কারন মানুষ দেখলেই আমার... আমাকে ঘুমাতে হবে। আমাকে ঘুমাতে হবে ।আমার ঘুম আসবেই... কিন্তু ঘুম তো আসেনা। যখনই ঘুম না আসার কথা মনে আসে- তখন ঘুম আরো বেশি করে পালায়। চারদিন ধরে আমার তাই হচ্ছে। আমার পেটে খিদে নেই- কারণ আমার পেটে এখন......... । আমার শরীর সুস্থ-কারণ আমি খেয়েছি...... কিন্তু মাথা ফেটে যাচ্ছে। এর কারণ কি আমি জানিনা। আমাকে কেউ জানায় নি। আমি কারো কাছেই জানতে ও চাইনি। শুধু জানি আমাকে ঘুমাতে হবে। ঘট করে আরেকটা শব্দ হল। এবং আমি বুঝতে পারলাম- আমার ঘরের মাঝে কিছু একটা- না না কিছু দুইটা অবশ্যই আছে। এবং ভাল ভাবেই আছে। এবং আমাকে এরা ঘুমাতে দেবেনা। আচ্ছা এরা যদি ওরা হয়? তাহলে তো আমি শেষ। কারণ আমি তো ওদের কে হজম করে ফেলেছি! এখন কি হবে? এখন আমি কিভাবে হজম করবো? শুনুন- আমাকে পাগল ভাববেন না। আমি পাগল নই। সুস্থ মাথায় সুস্থ মস্তিষ্কে আমি দুইজন- হ্যাঁ - দুইজন মানুষকে হত্যা করেছি। কারন ওরা আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল। কিন্তু আমি ওদের ক্ষমা ও করে দিতে পারতাম। আমি ওদের ক্ষমা করিনি- কারন ওরা বোঝুক বিশ্বাসঘাতকতার মূল্য জীবন দিয়েও শোধ করা যায়না। আমি ওদের খুন করেছি। নিজের হাতে খুন করেছি। ছুড়ি দিয়ে টুকরো টুকরো করেছি।তারপর... তারপর আমি ওদেরকে একেবারেই ভ্যানিশ করে দিয়েছি। কিভাবে জানেন? সে এক ইউনিক উপায়। আমি ওদের ...... আসলে আমি যে ফ্ল্যাটে আছি সেখানে খাবারের বড় অভাব। আমার টাকা ছিল- কিন্তু সেই টাকা খরচ করার কোন উপায় ছিলনা। আমি ডাকাতি করে এনেছিলাম সেগুলো। আমার সাথেই ছিল আমার দুই প্রাণপ্রিয় বন্ধু। আমি ওদের সহায়তায় টাকাগুলো যোগাড় করি। তারপর পালিয়ে এখানে আসি। পুলিশ আমাদের খুঁজছে। আর আমাদের টাকা গুলোর নাম্বার ওগুলো সব পুলিশের হাতে চলে গেছে অনেক আগেই। এখন আমরা ফেরার বুঝার পরই ওরা দুইজনে মিলে আমাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি বুঝে ফেলি যখন আমি আবিদের হাতে একটা চকচকে ছুড়ি দেখি। আমি এটা আগে ও অনেকবার দেখেছি। আমরা যখন সামাদ কে খুন করেছিলাম তখন আমি সেই ছুড়িটাই আবিদের হাতে দেখেছিলাম। এবং সাথে সাথে প্রথমে আবিদের গলা কেটে আলাদা করে ফেললাম। তারপর আবিরের শরীর টা দুইভাগ করে ফেললাম। আমার মাথায় কোন টেনশন ছিলোনা। আমি শুধু আমার বেঁচে থাকার উপায় বের করেছি মাত্র। কারন আমি ওদের না মেরে ফেললে আমাকে মেরে ফেলতো- আর আমার টাকার ভাগটা নিয়ে ভেগে যেতো এখান থেকে। কিন্তু আমি তার আগেই ওদের খতম করে দিয়েছি। অবশ্য এতে আমার অনুশোচনা হয়নি তা নয়। আমার মনে হয়েছে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। আমার নিজের জন্যই। আমি এই টাকা গুলো ব্যাংক থেকে চুরি করেইছি শুধু মাত্র আমার জীবন টাকে সুন্দর করার জন্য। অবশ্য আমি এগুলো টানা দুই সপ্তাহ খরচ করতে পারবোনা জানতাম। তবে এরকম বিপদে পড়ে যাবো ভাবতে পারিনি। কারণ এর পরেই আমি বেশ কয়েকবার এলাকায় পুলিশ টহলের শব্দ শুনেছি। পুলিশ হয়তো কোন না কোন ভাবে টের পেয়ে গেছে। আমি ওদের নাগালের ভেতরে আছি ভাবতেই আমার শরীর ভয়ে... । ঘরে কোন খাবার ছিলোনা। ছিল শুধুই ট্যাপের পানি। আমি একটাদিন পুরোটাই পানি খেয়ে কাটালাম। কিন্তু আমার পেট- পেট তো নয় কুয়া। খালি খাই খাই করে আমাকে যন্ত্রণা দেয়। আমার অবশ্য সমস্যা হয়নি। পরের দিনেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আমাকে বের হতে হবে এখান থেকে। কিন্তু বেরিয়েই আমি দেখি আমার ছবি পোষ্টারে টানানো। সাথে আমার দুই বন্ধুরো। আমার যা বোঝার সব বুঝে ফেলি। তারপর আবার ঘরে চলে আসি। এতই ভয় পেয়েছিলাম যে আমি নিজের জন্য খাবারটা পর্যন্ত কিনে খেতে পারিনি। আমি জানতাম আমি টাকা গুলো থেকে একটা বের করলেও ধরা পড়ে যাব। তারপর আমাক কেউ রক্ষা করতে পারবেনা। কারন আমার মামা চাচারা কেউ এখানে নেই। সব পরপারে চলে গেছে। সুতারাং আমি ফিরে এলাম। এবং তারপরেই আমার মাথায় আসল অন্য কিছু। আমি দেখলাম আমার পেট খিদেয় মরে যাচ্ছে। আমার শরীরে এক ফোটা শক্তি নেই। অথচ ঘরের মাঝে আস্ত মাংস পড়ে আছে... কি? ঠিক ধরেছেন- ঐ যে আমার বন্ধুরা। ওদেরদুইজনকে আমি রেখেছিলাম ঘরের মাঝেই একটা বাথরুমে। সেখানে গিয়ে সামান্য পচতে শুরু করা আবিদ আর আবিরের লাশ দুটোকে টুকরো টুকরো করে ধুয়ে ফেললাম। রান্না ঘরে যাবতীয় মশলা ছিল। আমি সেগুলো দিয়েই কোন রকমে রান্না করে খেয়ে নিয়েছি আবিরের রান টা। এর পর কেটে গেছে চার চারটি দিন। আমি দিব্যি এই ঘরের মাঝে ঠিকে আছি। খিদে পেলেই মাংস খাই। বিশ্বাস ঘাতকের মাংস। খুনে বন্ধুদের মাংস। এই মাংস খাবার মাঝে ও প্রতিশোধের নেশা আছে। আমি বুঝতে পারি এটা। বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারি। এবং বুঝি বলেই খেয়েছি। নাহ- আর শুয়ে থাকা যাচ্ছেনা। একটু আগেই খাবার খেয়েছিলাম। এখন আবার খিদে লেগেছে। আমি নিয়ম করে খাই। কিন্তু এখন আবার খিদে লেগেছে। কেন? উফ- কানের পাশে চিনচিনে শব্দ আরো বেড়েছে। আমাকে হয়তো আবারো খেতে হবে। আমি বলেছিলাম না- শরীর দুর্বল হয়ে গেলে এটা হয়। সব আমার মনের কল্পনা। আমি সব কিছু কল্পনা করেছি। কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। সব আমার মনের কল্পনা। সব আমি কল্পনা করেছি। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠতে যেতেই আমার পায়ে কিছু একটার স্পর্শ পেলাম। জিনিসটা ফুটবলের মত। শেষ কবে ফুটবল খেলেছিলাম মনে নেই। কিন্তু আমার খাটের নিচে ফুটবল ছিলো কি? বেশ ঠান্ডা আর স্যাঁতস্যাঁতে। আমি হাতড়ে গিয়ে আলোটা জ্বালাতেই টের পেলাম জিনিসটা কি। সেটা আর কিছু না আবিদের মাথা। আমি এটাকে এখানে নিয়ে আসিনি। ফ্রিজে রেখেছিলাম। কিন্তু এটা এখানে এলো কিভাবে? উফফ- আমি ভুল দেখছি। কারণ মাত্র দেখলাম কাটা মুন্ডুটার চোখ দুটো কেঁপে উঠল সামান্য। আমি দেখেছি- তবে ভুল দেখেছি। এটা হতে পারেনা। আমার বুকের ভেতর ভোঁতা হৃদয় লাফাতে শুরু করেছে। গায়ের সব লোম স্যাত করে দাঁড়িয়ে গেছে কবেই। এখন যেন উড়ে চলে যেতে চাইছে মহাকাশে। আমি ভুল দেখছি। নির্ঘাত ভুল দেখছি। এটা হতে পারেনা। হতে পারেই না কোন কালে। একটা মরা মানুষের কেটে ফেলা মুন্ডুর চোখ এভাবে খুলে যেতে পারেনা। না না নাআআআআআআআআআআআআআআআ।" ………………………………. ডায়েরিতে এর বেশি কিছু লেখা নেই। লেখাটা পুরোটা পড়ে ইন্সপেক্টর উজ্জ্বল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সবে মাত্র ডাকাতটার ঘর তল্লাসি করে তার লাশ পাওয়া গেছে। ভয়ার্ত এবং ভয়ানক একটা লাশ। লাশের এখানে ওখানে নানা রকম দাগ। কেউ ছিড়ে খুঁড়ে আহত করেছে। আর হাতে লেখা এই ডায়েরিটা পড়ে পুলিশ ফ্রিজ থেকে উদ্ধার করেছে দুটো লাশ। আর অনেক গুলো টাকা। পুলিশ জীবনে ও এই ফ্ল্যাট খুঁজে পেতনা। কিন্তু কে একজন এই ঘরের ফোন লাইন থেকে ফোন করে বলেছে এখানে ওরা আছে। ওদের তিনজনকেই পাওয়া যাবে। ওদের তিনজনকেই পাওয়া গেছে। দুইজন আধা খাওয়া হিসেবে। আরেকজন মৃত- সম্পূর্ন দেহে। কিন্তু ঘরের ভেতরের সেই মানুষটাকে আর খুঁজে পায়নি ইনস্পেক্টর উজ্জ্বল ;যে ফোন করে বলেছিল ওরা এই ঘরেই আছে

কান্নার রহস্য কি ? আমরা কেন কাদিঁ?




আমাদের জীবন শুরু হয় কান্না দিয়ে আবার শেষও হয় সবাইকে কাঁদিয়ে। সুখে কাঁদি আবার দুঃখেও কাঁদি। পৃথিবীর এমন কোন মানুষ নেই যে জীবনে কখনো কাঁদেনিকিন্তু কান্না আসলে কি এবং আমরা কেনই বা কাঁদি?

কেঁদে ফেলা মানেই আত্ম সমর্পণ করা। কেননা চোখে কান্না এলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে তখন তার দ্বারা কোনরুপ ক্ষতির আশংকা থাকে না। কান্নার  ব্যাপারে এটি অতি পুরাতন একটি ধারণা। তবে সে যাই হোক, কেন চোখে কান্না আসে- দেখা যাক সে ব্যাপারে বিজ্ঞান কি বলে।

ধোঁয়া অথবা পেঁয়াজের সালফেনিক এসিড চোখে আঘাত করলে কর্নিয়ার সংবেদনশীল স্নায়ু বা সেনসরি নার্ভ গুলো সাথে সাথে প্রতিরক্ষার জন্য মস্তিকে সংকেত পাঠায়। তখন মস্তিষ্ক চোখের পাতার ঠিক পেছনে অবস্থিত অশ্রুগ্রন্থি বা ল্যাকরিমাল গ্লান্ডে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত করে। এই হরমোন প্রতিরক্ষা স্বরুপ চোখের উপর জলের পর্দা তৈরি করে যা উত্তেজক ক্ষতিকারক উপাদান গুলোকে জলের সাথে বের করে দেয়। এই ধরনের কান্নাকে প্রতিফলন কান্না বা রিফ্লেক্সিভ টিয়ারস্‌ বলে।

কিন্তু আমরা তো অতিরিক্ত সুখ-আনন্দ ও দুঃখ-যন্ত্রণার অনুভূতি বা আবেগের কারণেও কেঁদে ফেলি। তখন কেনও কান্না আসে ? কেননা তখন মস্তিষ্কের সেরেব্রাম জেনে যায় কোন ঘটনা আমাদেরকে  খুবই আবগে প্রবণ করে ফেলেছে  যার ফলে মস্তিষ্কের অন্তঃস্রাব প্রনালী বা Endocrine System অশ্রুগ্রন্থিতে কতগুলো হরমোন নিঃসৃত করে যা চোখের উপর তরলাকারে ঝরে পড়ে এই অতিরিক্ত জল নাক দিয়েও বেরিয়ে পড়তে পারে

গবেষণায় দেখা গেছে এই ধরনের আবেগজনিত কান্নার পেছনে ভৌত-রসায়ন কারণ রয়েছে। প্রতিফলন কান্নায় রয়েছে ৯৮% জল। কিন্তু প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণার ফলে যে কান্না আসে তাতে রয়েছে এড্রিনোকোরটিকেট্রপিক হরমোন অপর দিকে শারীরিক আঘাতের যন্ত্রণার ফলে যে কান্না আসে তাতে রয়েছে লিউসিন এনকেফোলিন নামক এক ধরনের মরফিন যা ব্যাথা উপশম ও মানসিক অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করে।

তাহলে নারীরা কেন পুরুষের চেয়ে বেশি কাঁদে। বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে দেখেছেন যে একজন নারী পুরুষের চেয়ে চার গুণ বেশি কাঁদে। এর পেছনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও জীববিদ্যাগত কারণও রয়েছে।

বয়োঃসন্ধিকালের আগ পর্যন্ত ছেলে ও মেয়েদের কান্নার পরিমাণ সমান থাকে। কিন্তু বয়োঃসন্ধির পরবর্তী সময়ে ছেলেদের টেস্টোস্টেরন- এর মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে ছেলেরা দুঃখে ভারাক্রান্ত হবার চেয়ে বেশি রেগে যায়। আর মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই ইস্ট্রোজেন পিটুউটারি থেকে নিঃসৃত এন্ডোজেনাস মরফিন ‘এনডরফিনে’র উৎপাদনের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে মেয়েদের আবেগী করে তোলে। তাই মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি কাঁদে।
কিন্তু মধ্য বয়স্ক নর-নারীদের টেস্টোস্টেরন এবং ইস্ট্রোজেন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যায় তখন নারি ও পুরুষদের কান্নার মাত্রা সমান হয়ে যায়।  

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে কান্না হচ্ছে গভীর আবেগের সময় হরমোন ও অধিবিষ বা ক্ষতিকারক উপাদান নিঃসৃত করার উপায় মাত্র।



লালসালু - শেকড় থেকে শিখরে



সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ  বাংলা সাহিত্যে বিরলপ্রজ ও স্তম্ভ প্রতীম অত্যাধুনিক কথাশিল্পী । যিনি আপন নিষ্ঠ ও মনস্বতায়  স্বতন্ত্র শুদ্ব আধুনিক  সাহিত্যিক । সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ  এবং তাঁর ‘লালসুাল ’ (১৯৪৮ ) উপন্যাস আমাদের অবচেতনে আমাদের নাড়া দেয় । আমাদের নিয়ে যায় আমাদের জীবনের গভীরে । যুগ দ্বৈরথে জটিল চেতনা  প্রবাহী প্রকরণিক উৎকর্ষতা ও কাল চৈতন্যানুগ  বিষয়বস্তুর  ঋদ্ধতার গুণে ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যে চর্চায় আমাদের চিন্তা –মনোরাজ্য আতœা হয়ে উঠতে পারে ক্রামশ জাগ্রত ।
ইংরেজি অনুবাদে উপন্যাসটি “Ttee without roots” (শেকড়হীন বৃক্ষ)  নামে ‘লালসালু ’  বিখ্যাত ।

নির্দিষ্ট ভূ- খন্ডের আর্থ -সামাজিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে যে জীবন প্রবহমান তার  স্বরুপ আত্মস্থ করে তাকে  অনিবার্য শিল্পের আঙ্গিকে উপস্থাপন করার মধ্যেই  একজন শ্রেষ্ঠ উপন্যাসিকের শ্রেষ্ঠত্ব পুরোপুরি নির্ভর করে।

‘লালসালু  ’ উপন্যাসের উপকরণ হিসেবে বেছে  নিয়েছেন  শর্তবন্দী সমাজ ব্যবস্থায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা অসহায়  পশ্চাৎপদ গ্রামীণ জীবনের নিরুপায় ও বিপন্ন সত্ত্বারই করুণ কাহিনি ।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের  অব্যবহিত কাল পূর্বে উপন্যাসের কাহিনি যেখানে  ছিল অনির্বায ভাবে নগরকেন্দ্রিক ঠিক সেই সময় আমরা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অসীম দৃঢ়তা এবং সাহসীকতার পরিচয়  পাই তাঁর  ‘লালসালু ’ উপন্যাসে একটি অখ্যাত গ্রামের চিত্র অংকনের মধ্যে দিয়ে ‘লালসালু ’ উপন্যাস  আমাদের  সমাজ বাস্তবতাকে স্পর্শ করে । এদেশের ধর্মব্যবসায়ীর, পীর দরবেশ ,খাদেমদের চারিত্রিক অসংগতি , তাদের উপভৌগিক মানসিকতা , বহুবিবাহ প্রথা , ধর্মের নামে কুসংস্কার এমন অসংখ্য সামাজিক অনাচারকে, জীবনের রক্তিম সালু কাপড়ে  আবৃত স্থবির পচা ঘুণেধরা অনালোকিত সমাজের দ্যোতককে শিল্পী বিশেষ যতেœ ও সচেতনায় প্রোথিত করেছেন  তাঁর ‘লালসালু ’ র জমিনে ।

‘ লালসালু ’ উপন্যাস আমাদের  অস্তিত্ব ও অস্তিত্ববাদিতার কথা বলে । একদিকে  কুসংস্কারে আচ্ছন্ন  ধর্মভীরু দরিদ্র অসহায় গ্রামবাসী অন্যদিকে ধূর্ত  , প্রতারক র্ধম ব্যবসায়ী ও শোষক ভূ-স্বামী । মূল  বিষয়  হিসেবে উপন্যাসে উঠে এসেছে হাজার বছর ধরে চলা শিখর গাড়া কুসংস্কার । সুস্থ  স্বাভাবিক  জীবনাকাক্সক্ষার সাথে দ্বদ্ব চলেছে অন্ধবিশাস ও ভয় ভীতির ।

‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ একদা মতি গঞ্জের সড়ক বেয়ে মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করে । নিছক জৈবের তাগিদেই বিভগ্ন  বিস্মৃতি প্রাচীন এক  কররকে ‘মোদাচ্ছের পীরের কবর’ বলে ঘোষণা করে সহজ সরল গ্রামবাসীদের যুগপৎ চকিত  ও ভীতির কারণ করে তোলে আশেপাশের সকল গ্রামের মানুষের মমর্ন্তুদ কান্না , অশ্রæসজল কৃতজ্ঞতা , আশা ও ব্যর্থতার ইাতহাস ব্যক্ত হতে থাকে  ‘লালসালু’ দিয়ে ঢাকা কবরের কাছে । সাথে আসতে  থাকে ঝকঝকে পয়সা । ক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠাকে জীবন্ত রাখার  অটুট হাতিয়ার হয়ে ওঠে সালু কাপড়ে আবৃত মাছের  পিঠের  মতো ‘মোদাচ্ছের পীরের কবর । সামগ্রিকভাবে মজিদ হয়ে ওঠে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ।

অনুবর্র নোয়াখালী  অ ল জনবাহুল্যের চেয়ে উৎপাদিত শস্যোর পরিমাণ, অনাবৃষ্টি  অতিবৃষ্টিতে ফসল ধবংস হয়ে যায় । মবার দেশে সর্বত্র যেন রুক্ষতা , ঘর গুলো  যেন খাদ্যশস্য । তাই এখানে ক্ষুধার বিকল্পে ধর্মের অবস্থান । জীবিকার জন্য  এরা দেশ ত্যাগকরে আর  মূলধন হিসেব এরা অর্জন করে ধর্মীয় জ্ঞান ।

ন্যাংটা ছেলেও সিপারা পড়ে , গোঁফ ওঠার আগেই কোরানে হাফেজ  হয়ে ওঠে । কিন্তু তারা খোদার এলেম অর্জন করলেও , মাথায়  সারাক্ষণ টুপি পরলেও  খোদার প্রতি তাদের কোন আস্থা বা বিশ্বাস নেই । কারণ তাদের  পেটে অন্ন নেই । বাস্তবের  এই অপৃর্ণনতা ও অপ্রাপ্তির  বেদনা ভুলতে ধর্মের মোহন জগতে তারা প্রত্যাবর্তন করে। ধর্মের পাঠ গ্রহণ করে খোদার নেক  বান্দা হবার প্রাণান্তর চেষ্টা করে কিন্তু অন্তরে জীবিকার সর্বৈব চিন্তা ,ছলাকলা ,  ফন্দি ফিকির  এবং  কৌশল অবলম্বন করে । খোদাভক্তি তাদের পেটের  জ্বালা নিবারণ করতে পারেনা তাই তাদের  মনের  শন্তি আসেনা । তাই তারা ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের বদলে  আশ্রয়  করে ফাঁক ফাঁকির। এরই প্রেক্ষিতে  শস্যের চেয়ে টুপিধারীর সংখ্যাই বেশি ।সে টুপি খোলস মাত্র ,শুদ্ধ ধর্মবিশ্বাসে স্থিত নয় ।

তাই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ  তাঁর ‘লালসালু ’ উপন্যাসে চরম সত্য ও বাস্তব কথাই উচ্চারণ করেছেন Ñ
“শস্যের চেয়ে  টুপি বেশি , ধর্মের আগাছা বেশি ।

কেবলই কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাস । ফল ¯^রুন  ভীতি আর আত্মসমপর্ণ । অসহায়  গ্রামবাসীদের  প্রতারিত করে জমিদখল ,রহিমা ও জমিলাকে বিয়ে করা , নিজে ধর্মের প্রতি নিষ্ঠ না হয়ে  গ্রামবাসীদের  চিত্তে  কৌশলে ধর্মভাব  জাগিয়ে তাদের শাসন  ও শোষণ বিশেষ আর্থ -সামাজিক  কাঠামো ও অনিবার্য  দেশ কাল সংলগ্ন । শিল্পী এমনই এক সমাজের প্রতি আমাদের অঙ্গুলী  নির্দেশ করে দেখিয়েছেন  যেখানে ইতিবাচক বোধগুলো , সুন্দর , কল্যাণ অদৃশ্য সালু ঘেরা  কবরের শাসনে গ্রাসিত হয়ে হজম হয়ে যায় । গ্রামবাসী  প্রতিবাদহীন । রক্ত তাদের হীম শীতল ঠান্ডা , শত শোষণে ও যেন তাদের কোন রা নেই। সামন্তবাদী সমাজ শৃক্সখলে  বন্দী এই সব মানুষ গুলোর যন্ত্রণাকে আত্মস্থ করে শিল্পী উপন্যাসে প্রোথিত করেছেন ।

উপন্যাসের ধারাবাহিক  ঘটনাবিন্যাস , প্রবাহ মানতা এবং  প্রধান চরিত্রের মধ্যে  অন্তর্দ্বন্ধ ও মনস্তাওি¦  বিচারে পুরো উপন্যাসকে তিনটি স্তরে সাজানো  যায় Ñ

ক) উপন্যাসের শুরু থেকে মজিদের মহব্বত  নগর গ্রামে প্রবেশ পর্যন্ত ।
খ) মহব্বত নগর  গ্রামে  প্রবেশ করে জমিলাকে বিয়ে  পর্যন্ত 
গ) মজিদের ঘরে  জামিলার আগমন থেকে উপন্যাসের শেষ  পর্যন্ত ।

“বাইরে কুয়াশাচ্ছন্ন  রহস্যময় জ্যোৎ¯œা। তার আলোয়  ঘরের কুপিটার শিখা মনে হয় একবিন্দু রক্ত টাটকা, লাল টক্টকে। খোলা দরজা  দিয়ে  কুয়াশাচ্ছন্ন ¤œান জ্যোৎ¯œার পানেই চেয়ে থাকে   মজিদ , দৃষ্টিতে মানুষের  জীবনের  ব্যর্থতার বোঝা ।”

উপন্যাসিক মজিদ  চরিত্রের মনোজাগতিক  চেতনা সৃষ্টিতে বিভিন্ন  ধরনের  সংকেত ও প্রতীককে সৃষ্টি করেছেন । শেষ পর্যন্ত শিকড়ায়িত মজিদ তার অস্তিত্ব বিষয়ক সংকটে  দিশেহারা  হয়েছে  এবং শক্তিধর মজিদরুপ বিষবৃক্ষের সমূলে উৎপাটন  করে শিল্পী সমাজে শুভ শক্তির উদবোধন ঘোষণা  করেছেন । যায় ফল  স্বরুপ আমরা অজন্ম  বিল্পবী  জমিলা চরিত্র পেয়ে  যাই । মজিদের গায়ে থুথু দেয়া, মাজারে পা দিয়ে প্রকাশিত বিদ্রোহ - এগুলো সচেতন শিল্পীর চেতনা প্রবাহে ফলিত বাস্তবতা ।

আমাদের  অন্ধকারময় সমাজে মাঝে মাঝে আলোকময়  সওা উঁকি দেয় । ঠ্যাটা বুড়ো মজিদের ক্ষমতাকে তোয়াক্কা করেনা । কারণ সে সত্যানু সন্ধানী ।  শিক্ষিত যুবক মুক্ত মনের  অধিকারী আক্কাস কুসংস্কারকে দূর করে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায় ।
‘ যেখানে শিক্ষা সেখানেই আলো ’ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত আক্কাসের ভেতরের আলো জ্বলতে না জ্বলতেই শোষকের বলে নিভে যায় কিন্তু নিঃশেষিত হয়না । কারণ সমাজ বেঁচে থাকে আলোর প্রত্যাশীদের প্রত্যাশায় ।  জীবন শেষ হয়ে যায় কিন্তু জিজ্ঞাসা  শেষ হয় না । বিল্পবী  হারিয়ে যায় , কিন্তু বিপ্লব কখনো  মরেনা । জমিলা ঠ্যাটা বুড়ো , আক্কাস তাই কখনো মরেনা । মানুষের তৈরি অন্ধ সংস্কারের সাথে সরল মুক্ত বুদ্ধিব সংঘাত । সংঘাত প্রথাধর্মের সাথে অন্তরধর্মের । প্রতিবাদী হারায় , প্রতিবাদের স্পৃহা হারায়না ।

জমিলা বেদনার প্রতীক , তাই সে বিদ্রোহের প্রতীক । এক সত্যসন্ধানী ব্যক্তিসওা । সে ধর্মাশ্রয়ী  স্বৈর সমাজকে বিদ্রপ করে । সে নিঃসঙ্গ হলেও স্বাধীন । যে শেকড়হীন বৃক্ষ মানুষের শোষণের অস্ত্র, তা উৎপাটনের দায়িত্ববোধ ,সৎ ,মুক্ত ও নিঃশঙ্ক চিত্তের কারণে উড়রহম ও  ঝঁভভবৎরহম               এরদায়ে জমিলার সক্রিয়তা , মানবতা , জীবনমুখীনতা , অস্তিত্বরক্ষার চৈতন্য সংক্রমিত হয়েছে  অন্যসব মানুষের প্রতিনিধি রহিমাতে  । তাই রহিমার দৃঢ় উচ্ছারণ - “ধান দিয়া  কী হইব ,  মানুষের জান যদি না বাঁচে  ।”

মহব্বতনগর গ্রামে অশিতিপর খিটখিটে খ্যাংটা বুড়ি মজিদকে তোয়াক্কা না করে  তার শেষ সম্বল মাজারে  ছুঁড়ে মেরে পীরবাদের বিরুদ্ধে বিশেষ মাত্রার প্রতিবাদ  জানিয়েছে ।

তাহের কাদেরের বাপ উজ্জ্বল , সোচ্চার ও প্রতিবাদী  । শক্তিমান  মজিদের নির্দেশে মেয়ের কাছে মাফ চাওয়ার  কারণে ক্ষোভে দুঃখে অপমানে গ্রাম  ত্যাগ করেছে ।‘ লালসালু’  উপন্যাসের শক্তিধর মজিদের বিরুদ্বে প্রথম প্রতিবাদী চরিত্র  । সে জমিলার পূর্বসূরী। 

মজিদেরসমগোত্রীয় আওয়াল পুরের পীর শিকড়গাড়া মজিদের কাছে সে যেন ভ্রাম্যমাণ  । তার আত্ম প্রতিষ্ঠা মানে মজিদের সাথে অনিবার্য  সংঘাত । তাই সে ক্ষীণ কন্ঠ।

মতলুব মিয়া আমাদের সমাজের অনালোকিত সমাজসংলগ্ন  চরিত্র । ধর্মাপ্লুত গ্রামীণ ব্যক্তি ।  দুদু মিয়া প্রতিবাদহীন আদিম সারল্যের প্রতীক । খালেক ব্যাপারীর শ্যালক ধলামিয়া  কুসংস্কারাচ্ছন্ন  জীবন প্রবাহেরই দ্যোতক ।

বিওশালী খালেক ব্যাপারীর প্রথমা  স্ত্রী আমেনা বিবি । সে ঈর্ষাপরায়ন  মজিদের  ধর্মান্ধ্তারবলী  হয়ে  দীর্ঘ তের বছরের দাম্পত্যজীবন ছেড়ে চলে যায়  বাপের  বাড়ি । অসম সমাজ ব্যবস্থার কপট ধর্মাচারের শিকার আমেনা বিবি এক বেদনাদীন চরিত্র । মজিদ শেকড়হীন বৃক্ষ। অথচ সে  যেন তার সর্বশক্তি  দিয়ে  শুষে নিতে চাইছে আলোকিত সূর্য ।সবুজ জীবন ।  ‘লালসালু ’ উপন্যাসের মজিদ সর্বৈব প্রধান । তাই সে লেখকের সিসৃক্ষার শ্রেষ্ঠ ফসল । মজিদ চরিত্রকে পূর্ণতা দান করতে তাই প্রতিবাদী , প্রতিবাদহীন  অসংখ্য চরিত্রের অবতারণা করেছেন  লেখক ।

১। বিশ্বাসের পাথরেযেন খোদাই সে চোখ ।
২। দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা । সময় অসময়ে মিথ্যে কথা না বললে নয় ।

সংগ্রাম মুখর জীবনে আস্তিত্ববাদীতার শ্রেষ্ট উদাহরণ  মজিদ চরিত্র , তার এমন অসংখ্য উচ্চারণ এবং ‘ লালসালু ’ উপন্যাস । জীবনের উপর প্রবল  বিশ্বাসী মজিদের একসময়  প্রকৃতি  ও নারী দুই হারিয়েছে তথাপি  মজিদ  তার সাংঘাতিক খেলা থেকে দমেনি । চোখে তার পাথুরে বিশ্বাস , সব হারিয়েও সে নতুন করে জীবন গড়ার প্রত্যয়ে উদীপ্ত । পরাজয়ের গ্লানী নিয়েও মজিদ অন্ধকারে আলো  দেখে, জীবনকে সর্বাংশে ধরে রেখেছে । মজিদের অস্তিত্ববাদীতা , তার সংগ্রামশীলতা , জীবন মুখীনতা অসাধারণ , অদ্ভ’ত  সুন্দর এবং বিশ্বাস যোগ্য Ñ / পৃথিবীর প্রতি তথা জীবনের প্রতি মজিদের এই বিশ্বস্ততা যেমন মানবিক , তেমনি আধুনিক । মানুষের জীবন যাত্রা ও অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য সংগ্রামী  জীবনের চরিত্র মজিদ।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার কুসংস্কার ধর্ম ব্যবসার শেকড়   উন্মোচনে বেঁচে থাকার সুতীব্র বাসনার এবং নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার  মজিদ চরিত্র সৃষ্টিতে । দ্বদ্ব সংকুল পৃথিবীতে মানবতার অবমাননার  বিরুদ্ধে রহীমারসোচ্চার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে । সর্বোপরী সমস্ত অন্ধকার শেষে আলোকিত সূর্যদয়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ শিল্প সফল , সার্থক এবং  আশাবাদী ।

 অস্তিত্ববাদী দর্শনের সারকথা  সবার উপরে মানুষ সত্য‘ লালসালু’ উপন্যাসের ও চুড়ান্ত সত্য ও মূল কথা হিসেবে উঠে এসেছে আক্কাস , ঠ্যাটা বুড়ো  সহ বেশ কয়েকটি প্রতিবাদী চরিত্র ।  

অসীম আকাশের সীমাহীন নীল আস্তরণ যেমন পৃথিবীকে করে শুভ্র তেমনি রুচিশীল  , মননশীল।  সুশিক্ষিত যুবক আক্কাসের দৃঢ় প্রত্যয় সমাজ থেকে সকল জঞ্জাল সরিয়ে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার সংগ্রামে উপন্যাসিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেখিয়েছেন। তাই উপন্যাসিক তার ‘লালসালু ’ উপন্যাসে আক্কাস চরিত্র সৃষ্টি করে আমাদের  জীবনের শ্রেষ্ঠ বাণী শুনিয়েছেন ।

জীবনের দৃষ্টি পিছনের দিকে নয় , সামনের দিকেচলা ।
‘লালসালু’ উপন্যাসের ভাষার কারুকার্য  ও ঐশ্বর্য অনুধাবনে শিল্পীর বিশেযত্ব অসাধারণ ।
‘লালসালু ’ উপন্যাসে তিন ধরনের ভাষা পাওয়া যায়  
ক) প্রমিত বাংলা ভাষা
খ) মজিদের বৃত্তিক ভাষা
গ) অন্যান্য চরিত্রের উপভাষিক ভাষা ।




শিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ জীবনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে, সূক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করেছেন । সমাজকে এফোঁড় ও এফোঁড় করেছেন তাঁর চুলচেরা বিশ্লেষণে । ধীশক্তির মানসপুত্র শিল্পীর রক্তক্ষরণ হয়েছে সমাজের শোষণ এবং অরাজকতায় । তাই তিনি আমাদের সমাজের  চেহারাকে তুলে ধরতে প্রয়াস পেয়েছেন  তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে । সমাজের কালিমাকে ,পীরবাদকে শিল্পী তাঁর লেখনীতে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত শিল্প সফল ভাবে । শিল্পী মুক্তিকামী সমাজের, মুক্তিকামী মানুষের আলোকিত দিনের প্রত্যাশায় ঘোষণা করেছেন দৃঢ় উচ্চারণে -

“সবার উপরে মানুষ সত্য ,তাহার উপরে নাই ।”
                                                                ধন্যবাদ

সহায়ক বই- নবদূত / মোঃ দেদারুল আলম মুরাদ

শিক্ষিকা 
অনন্যা গুপ্তা 
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সৈয়দপুর

অশ্রুকাব্য - অনন্যা গুপ্তা



যেন প্রভেদ নেই -
শীতলিত চোখের পাতা আর
কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের প্রাতের ।
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে
সর্বভূক অমাবস্যার অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াই
নীলৎপল চাঁদ ।
নিদাঘ রোদে রাজ পথের শরীর পোড়ে-
জ্বর আসে ।
থিওসফিস্ট হই, মুক্তি খুঁজি
তারপরেও তলিয়ে যেতে থাকি ।
জাহ্নবীর জলে  স্নান সেরেও যেন থিতিয়ে উঠি ।
বুকের অগ্নিগর্ভ তথাপি  আসমুদ্র উত্তাল 
পঞ্চমী তিথি ধূসর ছায়া ফেলে ।
নস্যি ভাবনার দুরন্তপনায় ।
গড়ি প্রতিমা, দেই নৈবেদ্য ,
করি মূর্তি পূজা ।
অন্তর্লীন বিষাদে পৃথিবী তার রং বদলায় ।
শুধু বদলায়না -
অবোধ বালিকার নিকোষ পূজাচ্চর্ণার 


( উৎসর্গ -  আমার  বাবাকে )