সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলা সাহিত্যে
বিরলপ্রজ ও স্তম্ভ প্রতীম অত্যাধুনিক কথাশিল্পী । যিনি আপন নিষ্ঠ ও মনস্বতায় স্বতন্ত্র শুদ্ব
আধুনিক সাহিত্যিক । সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এবং তাঁর ‘লালসুাল ’ (১৯৪৮ ) উপন্যাস আমাদের অবচেতনে
আমাদের নাড়া দেয় । আমাদের নিয়ে যায় আমাদের জীবনের গভীরে । যুগ দ্বৈরথে জটিল চেতনা প্রবাহী প্রকরণিক উৎকর্ষতা ও কাল চৈতন্যানুগ বিষয়বস্তুর
ঋদ্ধতার গুণে ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যে চর্চায় আমাদের চিন্তা –মনোরাজ্য আতœা হয়ে উঠতে পারে
ক্রামশ জাগ্রত ।
ইংরেজি অনুবাদে উপন্যাসটি “Ttee
without roots” (শেকড়হীন বৃক্ষ) নামে ‘লালসালু
’ বিখ্যাত ।
নির্দিষ্ট ভূ- খন্ডের আর্থ -সামাজিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে যে জীবন প্রবহমান
তার স্বরুপ আত্মস্থ করে
তাকে অনিবার্য শিল্পের আঙ্গিকে উপস্থাপন করার
মধ্যেই একজন শ্রেষ্ঠ উপন্যাসিকের শ্রেষ্ঠত্ব
পুরোপুরি নির্ভর করে।
‘লালসালু ’ উপন্যাসের উপকরণ
হিসেবে বেছে নিয়েছেন শর্তবন্দী সমাজ ব্যবস্থায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা অসহায় পশ্চাৎপদ গ্রামীণ জীবনের নিরুপায় ও বিপন্ন সত্ত্বারই
করুণ কাহিনি ।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অব্যবহিত
কাল পূর্বে উপন্যাসের কাহিনি যেখানে ছিল অনির্বায
ভাবে নগরকেন্দ্রিক ঠিক সেই সময় আমরা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অসীম দৃঢ়তা এবং সাহসীকতার পরিচয় পাই তাঁর
‘লালসালু ’ উপন্যাসে একটি অখ্যাত গ্রামের চিত্র অংকনের মধ্যে দিয়ে ‘লালসালু
’ উপন্যাস আমাদের সমাজ বাস্তবতাকে স্পর্শ করে । এদেশের
ধর্মব্যবসায়ীর, পীর দরবেশ ,খাদেমদের চারিত্রিক অসংগতি , তাদের উপভৌগিক মানসিকতা , বহুবিবাহ
প্রথা , ধর্মের নামে কুসংস্কার এমন অসংখ্য সামাজিক অনাচারকে, জীবনের রক্তিম সালু কাপড়ে আবৃত স্থবির পচা ঘুণেধরা অনালোকিত সমাজের দ্যোতককে
শিল্পী বিশেষ যতেœ ও সচেতনায় প্রোথিত করেছেন তাঁর ‘লালসালু ’ র জমিনে ।
‘ লালসালু ’ উপন্যাস আমাদের
অস্তিত্ব ও অস্তিত্ববাদিতার কথা বলে । একদিকে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ধর্মভীরু দরিদ্র অসহায় গ্রামবাসী অন্যদিকে ধূর্ত , প্রতারক র্ধম ব্যবসায়ী ও শোষক ভূ-স্বামী । মূল বিষয় হিসেবে
উপন্যাসে উঠে এসেছে হাজার বছর ধরে চলা শিখর গাড়া কুসংস্কার । সুস্থ স্বাভাবিক জীবনাকাক্সক্ষার সাথে দ্ব›দ্ব চলেছে অন্ধবিশাস
ও ভয় ভীতির ।
‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ একদা মতি গঞ্জের সড়ক বেয়ে
মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করে । নিছক জৈবের তাগিদেই বিভগ্ন বিস্মৃতি প্রাচীন এক কররকে ‘মোদাচ্ছের পীরের কবর’ বলে ঘোষণা করে সহজ
সরল গ্রামবাসীদের যুগপৎ চকিত ও ভীতির কারণ
করে তোলে আশেপাশের সকল গ্রামের মানুষের মমর্ন্তুদ কান্না , অশ্রæসজল কৃতজ্ঞতা
, আশা ও ব্যর্থতার ইাতহাস ব্যক্ত হতে থাকে
‘লালসালু’ দিয়ে ঢাকা কবরের কাছে । সাথে আসতে থাকে ঝকঝকে পয়সা । ক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠাকে জীবন্ত
রাখার অটুট হাতিয়ার হয়ে ওঠে সালু কাপড়ে আবৃত
মাছের পিঠের মতো ‘মোদাচ্ছের পীরের কবর । সামগ্রিকভাবে মজিদ হয়ে
ওঠে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ।
অনুবর্র নোয়াখালী অ ল জনবাহুল্যের
চেয়ে উৎপাদিত শস্যোর পরিমাণ, অনাবৃষ্টি অতিবৃষ্টিতে
ফসল ধবংস হয়ে যায় । মবার দেশে সর্বত্র যেন রুক্ষতা , ঘর গুলো যেন খাদ্যশস্য । তাই এখানে ক্ষুধার বিকল্পে ধর্মের
অবস্থান । জীবিকার জন্য এরা দেশ ত্যাগকরে আর মূলধন হিসেব এরা অর্জন করে ধর্মীয় জ্ঞান ।
ন্যাংটা ছেলেও সিপারা পড়ে , গোঁফ ওঠার আগেই কোরানে হাফেজ হয়ে ওঠে । কিন্তু তারা খোদার এলেম অর্জন করলেও
, মাথায় সারাক্ষণ টুপি পরলেও খোদার প্রতি তাদের কোন আস্থা বা বিশ্বাস নেই । কারণ
তাদের পেটে অন্ন নেই । বাস্তবের এই অপৃর্ণনতা ও অপ্রাপ্তির বেদনা ভুলতে ধর্মের মোহন জগতে তারা প্রত্যাবর্তন
করে। ধর্মের পাঠ গ্রহণ করে খোদার নেক বান্দা
হবার প্রাণান্তর চেষ্টা করে কিন্তু অন্তরে জীবিকার সর্বৈব চিন্তা ,ছলাকলা , ফন্দি ফিকির
এবং কৌশল অবলম্বন করে । খোদাভক্তি তাদের
পেটের জ্বালা নিবারণ করতে পারেনা তাই তাদের মনের শন্তি
আসেনা । তাই তারা ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের বদলে
আশ্রয় করে ফাঁক ফাঁকির। এরই প্রেক্ষিতে শস্যের চেয়ে টুপিধারীর সংখ্যাই বেশি ।সে টুপি খোলস
মাত্র ,শুদ্ধ ধর্মবিশ্বাসে স্থিত নয় ।
তাই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর
‘লালসালু ’ উপন্যাসে চরম সত্য ও বাস্তব কথাই উচ্চারণ করেছেন Ñ
“শস্যের চেয়ে টুপি বেশি , ধর্মের
আগাছা বেশি ।
কেবলই কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাস । ফল ¯^রুন ভীতি আর আত্মসমপর্ণ । অসহায় গ্রামবাসীদের
প্রতারিত করে জমিদখল ,রহিমা ও জমিলাকে বিয়ে করা , নিজে ধর্মের প্রতি নিষ্ঠ না
হয়ে গ্রামবাসীদের চিত্তে
কৌশলে ধর্মভাব জাগিয়ে তাদের শাসন ও শোষণ বিশেষ আর্থ -সামাজিক কাঠামো ও অনিবার্য দেশ কাল সংলগ্ন । শিল্পী এমনই এক সমাজের প্রতি আমাদের
অঙ্গুলী নির্দেশ করে দেখিয়েছেন যেখানে ইতিবাচক বোধগুলো , সুন্দর , কল্যাণ অদৃশ্য
সালু ঘেরা কবরের শাসনে গ্রাসিত হয়ে হজম হয়ে
যায় । গ্রামবাসী প্রতিবাদহীন । রক্ত তাদের
হীম শীতল ঠান্ডা , শত শোষণে ও যেন তাদের কোন রা নেই। সামন্তবাদী সমাজ শৃক্সখলে বন্দী এই সব মানুষ গুলোর যন্ত্রণাকে আত্মস্থ করে
শিল্পী উপন্যাসে প্রোথিত করেছেন ।
উপন্যাসের ধারাবাহিক ঘটনাবিন্যাস
, প্রবাহ মানতা এবং প্রধান চরিত্রের মধ্যে অন্তর্দ্বন্ধ ও মনস্তাওি¦ক বিচারে পুরো উপন্যাসকে তিনটি স্তরে সাজানো যায় Ñ
ক) উপন্যাসের শুরু থেকে মজিদের মহব্বত নগর গ্রামে প্রবেশ পর্যন্ত ।
খ) মহব্বত নগর গ্রামে প্রবেশ করে জমিলাকে বিয়ে পর্যন্ত
।
গ) মজিদের ঘরে জামিলার আগমন
থেকে উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত ।
“বাইরে কুয়াশাচ্ছন্ন রহস্যময়
জ্যোৎ¯œা। তার আলোয় ঘরের কুপিটার শিখা মনে হয় একবিন্দু রক্ত টাটকা,
লাল টক্টকে। খোলা দরজা দিয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন ¤œান জ্যোৎ¯œার পানেই চেয়ে
থাকে মজিদ , দৃষ্টিতে মানুষের জীবনের
ব্যর্থতার বোঝা ।”
উপন্যাসিক মজিদ চরিত্রের মনোজাগতিক চেতনা সৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের সংকেত
ও প্রতীককে সৃষ্টি করেছেন । শেষ পর্যন্ত শিকড়ায়িত মজিদ তার অস্তিত্ব বিষয়ক সংকটে দিশেহারা
হয়েছে এবং শক্তিধর মজিদরুপ বিষবৃক্ষের
সমূলে উৎপাটন করে শিল্পী সমাজে শুভ শক্তির
উদবোধন ঘোষণা করেছেন । যায় ফল স্বরুপ আমরা অজন্ম বিল্পবী
জমিলা চরিত্র পেয়ে যাই । মজিদের গায়ে
থুথু দেয়া, মাজারে পা দিয়ে প্রকাশিত বিদ্রোহ - এগুলো সচেতন
শিল্পীর চেতনা প্রবাহে ফলিত বাস্তবতা ।
আমাদের অন্ধকারময় সমাজে মাঝে
মাঝে আলোকময় সওা উঁকি দেয় । ঠ্যাটা বুড়ো মজিদের
ক্ষমতাকে তোয়াক্কা করেনা । কারণ সে সত্যানু সন্ধানী । শিক্ষিত যুবক মুক্ত মনের অধিকারী আক্কাস কুসংস্কারকে দূর করে গ্রামে স্কুল
প্রতিষ্ঠা করতে চায় ।
‘ যেখানে শিক্ষা সেখানেই আলো ’ এই মন্ত্রে উজ্জীবিত আক্কাসের ভেতরের
আলো জ্বলতে না জ্বলতেই শোষকের বলে নিভে যায় কিন্তু নিঃশেষিত হয়না । কারণ সমাজ বেঁচে
থাকে আলোর প্রত্যাশীদের প্রত্যাশায় । জীবন
শেষ হয়ে যায় কিন্তু জিজ্ঞাসা শেষ হয় না । বিল্পবী হারিয়ে যায় , কিন্তু বিপ্লব কখনো মরেনা । জমিলা ঠ্যাটা বুড়ো , আক্কাস তাই কখনো মরেনা
। মানুষের তৈরি অন্ধ সংস্কারের সাথে সরল মুক্ত বুদ্ধিব সংঘাত । সংঘাত প্রথাধর্মের সাথে
অন্তরধর্মের । প্রতিবাদী হারায় , প্রতিবাদের স্পৃহা হারায়না ।
জমিলা বেদনার প্রতীক , তাই সে বিদ্রোহের প্রতীক । এক সত্যসন্ধানী ব্যক্তিসওা
। সে ধর্মাশ্রয়ী স্বৈর সমাজকে বিদ্রপ
করে । সে নিঃসঙ্গ হলেও স্বাধীন । যে শেকড়হীন বৃক্ষ মানুষের শোষণের
অস্ত্র, তা উৎপাটনের দায়িত্ববোধ ,সৎ ,মুক্ত ও নিঃশঙ্ক চিত্তের কারণে উড়রহম ও ঝঁভভবৎরহম এরদায়ে জমিলার সক্রিয়তা , মানবতা
, জীবনমুখীনতা , অস্তিত্বরক্ষার চৈতন্য সংক্রমিত হয়েছে অন্যসব মানুষের প্রতিনিধি রহিমাতে । তাই রহিমার দৃঢ় উচ্ছারণ - “ধান দিয়া কী হইব ,
মানুষের জান যদি না বাঁচে ।”
মহব্বতনগর গ্রামে অশিতিপর খিটখিটে খ্যাংটা বুড়ি মজিদকে তোয়াক্কা না করে তার শেষ সম্বল মাজারে ছুঁড়ে মেরে পীরবাদের বিরুদ্ধে বিশেষ মাত্রার প্রতিবাদ জানিয়েছে ।
তাহের কাদেরের বাপ উজ্জ্বল , সোচ্চার ও প্রতিবাদী । শক্তিমান
মজিদের নির্দেশে মেয়ের কাছে মাফ চাওয়ার
কারণে ক্ষোভে দুঃখে অপমানে গ্রাম ত্যাগ
করেছে ।‘ লালসালু’ উপন্যাসের শক্তিধর মজিদের
বিরুদ্বে প্রথম প্রতিবাদী চরিত্র । সে জমিলার
পূর্বসূরী।
মজিদেরসমগোত্রীয় আওয়াল পুরের পীর শিকড়গাড়া মজিদের কাছে সে যেন ভ্রাম্যমাণ । তার আত্ম প্রতিষ্ঠা মানে মজিদের সাথে অনিবার্য সংঘাত । তাই সে ক্ষীণ কন্ঠ।
মতলুব মিয়া আমাদের সমাজের অনালোকিত সমাজসংলগ্ন চরিত্র । ধর্মাপ্লুত গ্রামীণ ব্যক্তি । দুদু মিয়া প্রতিবাদহীন আদিম সারল্যের প্রতীক । খালেক
ব্যাপারীর শ্যালক ধলামিয়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন জীবন প্রবাহেরই দ্যোতক ।
বিওশালী খালেক ব্যাপারীর প্রথমা
স্ত্রী আমেনা বিবি । সে ঈর্ষাপরায়ন
মজিদের ধর্মান্ধ্তারবলী হয়ে দীর্ঘ
তের বছরের দাম্পত্যজীবন ছেড়ে চলে যায় বাপের বাড়ি । অসম সমাজ ব্যবস্থার কপট ধর্মাচারের শিকার
আমেনা বিবি এক বেদনাদীন চরিত্র । মজিদ শেকড়হীন বৃক্ষ। অথচ সে যেন তার সর্বশক্তি দিয়ে শুষে
নিতে চাইছে আলোকিত সূর্য ।সবুজ জীবন । ‘লালসালু
’ উপন্যাসের মজিদ সর্বৈব প্রধান । তাই সে লেখকের সিসৃক্ষার শ্রেষ্ঠ ফসল । মজিদ চরিত্রকে
পূর্ণতা দান করতে তাই প্রতিবাদী , প্রতিবাদহীন
অসংখ্য চরিত্রের অবতারণা করেছেন লেখক
।
১। বিশ্বাসের পাথরেযেন খোদাই সে চোখ ।
২। দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা । সময় অসময়ে মিথ্যে কথা না বললে নয় ।
সংগ্রাম মুখর জীবনে আস্তিত্ববাদীতার শ্রেষ্ট উদাহরণ মজিদ চরিত্র , তার এমন অসংখ্য উচ্চারণ এবং ‘ লালসালু
’ উপন্যাস । জীবনের উপর প্রবল বিশ্বাসী মজিদের
একসময় প্রকৃতি ও নারী দুই হারিয়েছে তথাপি মজিদ তার
সাংঘাতিক খেলা থেকে দমেনি । চোখে তার পাথুরে বিশ্বাস , সব হারিয়েও সে নতুন করে জীবন
গড়ার প্রত্যয়ে উদীপ্ত । পরাজয়ের গ্লানী নিয়েও মজিদ অন্ধকারে আলো দেখে, জীবনকে সর্বাংশে ধরে রেখেছে । মজিদের অস্তিত্ববাদীতা
, তার সংগ্রামশীলতা , জীবন মুখীনতা অসাধারণ , অদ্ভ’ত সুন্দর এবং বিশ্বাস যোগ্য Ñ / পৃথিবীর প্রতি
তথা জীবনের প্রতি মজিদের এই বিশ্বস্ততা যেমন মানবিক , তেমনি আধুনিক । মানুষের জীবন
যাত্রা ও অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য সংগ্রামী
জীবনের চরিত্র মজিদ।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার কুসংস্কার ধর্ম ব্যবসার শেকড় উন্মোচনে বেঁচে থাকার সুতীব্র বাসনার এবং নিজের
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মজিদ চরিত্র সৃষ্টিতে
। দ্ব›দ্ব সংকুল পৃথিবীতে
মানবতার অবমাননার বিরুদ্ধে রহীমারসোচ্চার প্রতিবাদের
মধ্য দিয়ে । সর্বোপরী সমস্ত অন্ধকার শেষে আলোকিত সূর্যদয়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ শিল্প
সফল , সার্থক এবং আশাবাদী ।
অস্তিত্ববাদী দর্শনের সারকথা সবার উপরে মানুষ সত্য‘ লালসালু’ উপন্যাসের ও চুড়ান্ত
সত্য ও মূল কথা হিসেবে উঠে এসেছে আক্কাস , ঠ্যাটা বুড়ো সহ বেশ কয়েকটি প্রতিবাদী চরিত্র ।
অসীম আকাশের সীমাহীন নীল আস্তরণ যেমন পৃথিবীকে করে শুভ্র তেমনি রুচিশীল , মননশীল।
সুশিক্ষিত যুবক আক্কাসের দৃঢ় প্রত্যয় সমাজ থেকে সকল জঞ্জাল সরিয়ে পৃথিবীকে বাসযোগ্য
করার সংগ্রামে উপন্যাসিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেখিয়েছেন। তাই উপন্যাসিক তার ‘লালসালু
’ উপন্যাসে আক্কাস চরিত্র সৃষ্টি করে আমাদের
জীবনের শ্রেষ্ঠ বাণী শুনিয়েছেন ।
জীবনের দৃষ্টি পিছনের দিকে নয় , সামনের দিকেচলা ।
‘লালসালু’ উপন্যাসের ভাষার কারুকার্য ও ঐশ্বর্য অনুধাবনে শিল্পীর বিশেযত্ব অসাধারণ ।
‘লালসালু ’ উপন্যাসে তিন ধরনের ভাষা পাওয়া যায়
ক) প্রমিত বাংলা ভাষা
খ) মজিদের বৃত্তিক ভাষা
গ) অন্যান্য চরিত্রের উপভাষিক ভাষা ।
শিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ জীবনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে, সূক্ষ দৃষ্টিতে বিচার
করেছেন । সমাজকে এফোঁড় ও এফোঁড় করেছেন তাঁর চুলচেরা বিশ্লেষণে
। ধীশক্তির মানসপুত্র শিল্পীর রক্তক্ষরণ হয়েছে সমাজের শোষণ এবং অরাজকতায় । তাই তিনি
আমাদের সমাজের চেহারাকে তুলে ধরতে প্রয়াস পেয়েছেন তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে । সমাজের কালিমাকে ,পীরবাদকে
শিল্পী তাঁর লেখনীতে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত শিল্প সফল ভাবে । শিল্পী মুক্তিকামী সমাজের,
মুক্তিকামী মানুষের আলোকিত দিনের প্রত্যাশায় ঘোষণা করেছেন দৃঢ় উচ্চারণে -
“সবার উপরে মানুষ সত্য ,তাহার উপরে নাই ।”
ধন্যবাদ
সহায়ক বই- নবদূত / মোঃ দেদারুল আলম মুরাদ
শিক্ষিকা
অনন্যা
গুপ্তা
ক্যান্টনমেন্ট
পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সৈয়দপুর