১৬ই মে বৃহস্পতিবার ১৯২৯ , হলিউডের ইতিহাসে সূচনা হয় নতুন দিনের ইতিহাসের । আমেরিকার ( সঠিক ঠিকানা লিখো) রোজভেল্ট হোটেলে শুরু হয়েছিল রুপালী পর্দার নামীদামী তারকা আর শক্তিমান
অভিনেতা অভিনেত্রীদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান “একাডেমি অ্যাওয়ার্ড” । বর্তমানে যা “অস্কার” নামে খ্যাত। সেই সময়ের পাঁচ ডলারের টিকিটের বিনিময়ে মাত্র
২৭০ জন দর্শক পনের মিনিটের সেই অনুষ্ঠানটি দেখার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন । সেই থেকে বিশ্ব
চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রতিটি অভিনেতা ও
অভিনেত্রীদের কাছে “অস্কার” প্রাপ্তি হয়ে ওঠে সর্বোচ্চ সম্মান ও স্বীকৃতির মাপকাঠি
। ( আরও একটু ডিটেইলস লিখো এখানে )
এ পর্যন্ত অসংখ্য অভিনেতা ও অভিনেত্রী তাদের কাজের
সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরুষ্কার পেলে ও এমন কিছু অভেনেতা ও অভিনেত্রী আছেন যাদের নাম শুনলেই
সারা সিনেমা দুনিয়া কাঁপে , অথচ তারা এখনও নিজেদের ঝুলিতে অস্কার তুলতে পারেন নি । চলচ্চিত্র অঙ্গনে দাপটের সাথে
অভিনয় করে চলেছেন ,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে একাধিক পুরুষ্কারও পেয়েছেন । কিন্তু ছুঁই
ছুঁই করেও অস্কারের মঞ্চটা যেন তারা কিছুতেই ছুঁতে পারছেন না । এরকম দশ জন খ্যতিমান অভিনেতার নাম জানার পর
অনেকেরই পিলে চমকে যাবে , লিওনার্দো ডি ক্যাপরিও , ব্র্যাড পিট অথবা “চ্যাপলিন”
ছবির অভিনেতা রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। বহুবার
মনোনীত হয়েছেন ,কিন্তু অস্কার পাননি এরকমই শক্তিমান দশ অভিনেতার গল্প বলছি এখানে ।
দশ
রবার্ট ডাউনি জুনিয়র।
রবার্ট ব্রাউন জুনিয়র ১৯৭০ সালে তার বাবার পরিচালনায়
ক্যারিয়ারে প্রথম ছবি “পাউন্ড” এ অসধারন অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক ও সমালোচকদের মন জয়
করে নেন। তার উল্লেখ যোগ্য ব্যাবসা সফল ছবিগুলো হচ্ছে আয়রন ম্যান, আয়রন ম্যান ২,
আয়রন ম্যান ৩, শার্লক হোমস্, শার্লক হোমস্ঃ এ গেমস্ অব স্যাডোস্, অ্যাভেঞ্জারস
অ্যাসেমবলস্, ট্রপিক ঠান্ডার সহ আরো অনেক ছবি। আশি ও নব্বই দশকে তিনি টাফ টার্ফ, উইয়ার্ড সায়েন্স, ট্রু ভিলিবার,
ন্যাচারেল বর্ন কিলার এবং ওয়ান্ডার বয়েজ এর
মত ছবির কাজ করে যথেষ্ট সুখ্যাতি ও সম্মান অর্জন করেন। বিশেষ করে ১৯৯২ সালে
“চ্যাপলিন” ছবিতে তার অভিনয় ছিল অনবদ্য। চ্যাপলিন এ অসাধারন অভিনয়ের জন্য তিনি
অস্কার মনোনয়নও পেয়েছিল। কিন্তু তার অস্কার না পাওয়াটাই সকলকে বিষ্মিত করেছে।
দীর্ঘ চল্লিশ বছর অভিনয় জীবনে তার অস্কার অপ্রাপ্তিই
হচ্ছে একমাত্র অপূর্নতা।
নয়
আলবার্ট ফিনি
ইংরেজ এই অভিনেতা মঞ্চ অভিনয় দিয়ে তার পেশাজীবন শুরু করেন।
১৯৬০ সালে “ দ্য এন্টারটেইনার” ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়।
একাধিক বার গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা সহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করলেও পাঁচ বার অস্কার
মনোনয়ন পাওয়া এই অভিনেতা একবারও অস্কার জিততে পারেনি। ( আরেকটু বড় করো পারলে , পাঁচটা ছবির যেকোনো ২
টা নিইয়ে একটু গল্প বলও , তাঁর অভিনয় কেমন ছিল ব্লা ব্লা )
আট
এডয়ার্ড হ্যারিসন নরটন
অনেক খ্যাতিমান কলা কুশলীদের অস্কার মনোনয়ন পাওয়ার জন্য
কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে, সেখানে এডয়ার্ড নরটন তার পেশাজীবনের প্রথম ছবি “প্রাইমাল
ফিয়ার” এ সেরা পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে অস্কার মনোনয়ন পান। তার দু বছর পরে ১৯৯৮ সালে
“আমেরিকান হিস্টোরি এক্স” এ প্রধান
চরিত্রে অভিনয় করে আরেকবার অস্কার মনোনয়ন পান।
কিন্তু তিনি দু’বারের একবারও তাঁর
ভাগ্যে অস্কারের সিকি ছিড়ল
না ।
সাত
উইল স্মিথ
চার বার গ্রামিও
অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ‘ দ্যা ফ্রেস প্রিন্স ‘ খ্যাত জনপ্রিয় র্যাপার, টেলিভিশনের একজন বড় তারকা এবং বক্স অফিস হিট করা
অসংখ্য ছবির সফল অভিনেতা। ফোর্বস্ এর ধনী অভিনেতার তালিকাও তিনি রয়েছেন। সর্বমোট চার বার গ্লোডেন গ্লোব ও দুই
বার অস্কার মনোনয়ন পেয়েছেন।কমেডি, অ্যাকশন, সিরিয়াস সব চরিত্রে পারদর্শী এই
অভিনেতা “আলী” এবং “পারস্যুট অফ হ্যাপিনেস” ছবি অস্কার মনোনয়ন পেলেও অস্কার তার
কাছে এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে।
ছয়
জনি ডেপ
“ক্যারিবিয়ান পাইরেটস” এর সেই বিখ্যাত নাবিক চরিত্র ‘জ্যাকস
স্প্যারো’র ভূমিকায় অভিনয় করেন জনি ডেপ। ২০১২ সালে হলিউডে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের পাওয়া এই তারকার
নাম গিনিস বুক অব রেকর্ডের পাতায় স্থান করে নেয়। তার সর্বাধিক ব্যাবসা সফল ছবি
গুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যারাবিয়ান পাইরেটস্ এর সিরিজ, এলিস ইন ওউয়ান্ডার ল্যান্ড,
চার্লি এন্ড চকোলেট ফ্যাক্টরী, এবং দ্যা টুরিস্ট উল্লেখ যোগ্য। “পাইরেটস্ অব
ক্যারিবিয়ানঃ দ্যা কার্স অব ব্ল্যাক পার্ল”, “ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড”, “সুইনি টডঃ
দ্যা ডিমন বার্বার অব ফ্লিট স্ট্রিট” এই তিনটি ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সেরা
অভিনেতা হিসেবে অস্কার মনোয়ন পেলেও তার অস্কার না জেতার আক্ষেপ রয়েই গেছে। যদিও
গোল্ডেন গ্লোব, পিপপল্ চয়েস অ্যাওয়ার্ড, এমটিভি মুভি অ্যাওয়ার্ড সহ অসংখ্য
পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই গুনি অভিনেতা।
পাঁচ
ব্র্যাড পিট
গ্লোডেন গ্লোব, স্ক্রীন অ্যাকটর গিল্ড অ্যাওয়ার্ড, বাফটা
সহ সব ধরনের বড় পুরস্কার তার ঝুলিতে রয়েছে। এমনকি অস্কারও তিনি পেয়েছেন তবে
অভিনেতা হিসেবে নয় প্রযোজক হিসেবে। “টুয়েলভ ইয়ার অব স্লেভ” এর প্রযোজক হিসেবে তিনি
এই খেতাব জিতেন। কিন্তু অভিনেতা হিসেবে তিন তিন বার মনোনয়ন পেয়েও তিনি অস্কার
জিততে পারেননি।
তার অস্কার মনোনিত ছবি গুলো হচ্ছে টুয়েলভ মাংকিস, দ্যা কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন
বাটন, এবং মানিবল।
চার
রিচার্ড বার্টন
সাত সাতটা বার অস্কার মনোনয়ন পেয়েও জীবনে একবারও অস্কার
জিততে পারেন। ষাটের দশকে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা। বক্স অফিস
হিট করা এবং অনেক পুরস্কার প্রাপ্ত এই গুনি অভিনেতা ১৯৮৪ সালে মারা যান ।
রিচার্ড বার্টনের অস্কার মনোনয়ন প্রাপ্ত ছবি হলো হচ্ছে
মাই কাজিন র্যাচেল (সেরা পার্শ্ব
চরিত্র)
দ্যা রোব
বেকেট
দ্যা স্পাই হু কেম ইন ফ্রম কোল্ড
হুস আফ্রেড অব ভার্জিনিয়া ওলফ
অ্যানে অব দ্যা থাউজেন্ড ডেইজ
এবং ইকুয়াস।
তিন
লিওনার্দো ডি ক্যাপরিও
সেরা ছবি দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু
করেছিলেন ; “টাইটেনিক” ছবির জ্যাক ডসনের কথাই বলছি । এই নামেই তিনি ‘টাইটানিকে’র
নায়ক চরিত্রে অভিনয় করে পৃথিবীর সিনেমা ইতিহাসে নিজের নাম অক্ষয় করে ফেলেছেন বহু
আগে । খুব কম অভিনেতাই নিজের প্রথম ছবি দিয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হয়েছেন । দুইবার গ্লোডেন গ্লোব সহ
ক্রিটিকস চয়েস মুভি অ্যাওয়ার্ড এর খেতাব জেতা পাঁচ বার মনোনয়ন পাওয়া এই অভিনেতা
তার দীর্ঘ বিশ বছরের চলচ্চিত্র জগৎ এ কোন
বারই অস্কার হাতে তুলতে পারেননি। তার অভিনীত মোট সাতটি চলচ্চিত্র অস্কার মনোনিত
হয়েছে তার মধ্যে দুটি সেরা চলচ্চিত্রের খেতাব জিতেছে। টাইটেনিক ছবিতে মূল ভূমিকা
অভিনয় করে সমালোচক ও দর্শকদের ভুয়সী প্রশংসা পাওয়া
এই অভিনেতা সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার বঞ্চিত হওয়াটা ছিল বিস্ময়কর ঘটনা। টাইটেনিক
ছাড়াও সেরা পার্শ্ব চরিত্রের জন্য ‘হোয়াটস্
ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ’ এবং ‘দ্যা অ্যাভিয়েটর,ব্লাড ডায়মন্ড’, ‘দ্যা ওলফ অব দ্যা
ওয়াল স্ট্রিট’ ছবি গুলোতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার মনোনয়ন
পান।
দুই
গ্যারি লিওনার্দো ওল্ডম্যান
বলা হয়ে থাকে জীবিত কিংবদন্তীর
মাঝে তিনি অন্যতম যিনি কোন অস্কার জিততে পারেনি। বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনে সর্বোচ্চ
সকল পুরস্কার একাধিক অর্জন করতে পারলেও অস্কার পুরস্কার এখনো তার অধরা রয়ে গেছে।
তার সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্য যা তাকে সবার
থেকে আলাদা করে রেখেছে সেটা হচ্ছে তার অভিনয়ের বিষ্ময়কর বহুমুখী প্রতিভা। প্রধান
চরিত্র, খল চরিত্র, কমেডি, সিরিসাস যেকোন ধরনের চরিত্রে তিনি সফল হয়েছেন।একমাত্র “টিনকার
টেইলার সোলজারস্ স্পাই” ছবির জন্য তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার মনোনয়ন পান।
এক
পিটার ও’টুল
ষাট বছর অভিনয় জীবনে চারবার
গোল্ডেন গ্লোব সহ বাফটা, অ্যামি ও অনারী একাডেমি সহ অনেক পুরস্কার। তুখোড় এই অভিনেতা সর্বোচ্চ আটবার
অস্কারের জন্য মনোনয়ন পান। তার মনোনয়ন প্রাপ্ত ছবি গুলো হচ্ছে লরেন্স অব
অ্যারাবিয়া, বেকেট, দ্যা লায়ন ইন উইনটার,গুড বাই, মিস্টার চিপস্, দ্যা রুলিং
ক্লাস, দ্যা স্টান্ট ম্যান, মাই ফেবারিট ইয়ার এবং
ভেনাস। কিন্তু তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি কখনই অস্কার পদকটি উঁচিয়ে তুলতে
পারেননি। ২০১৩ সালে ১৪ই ডিসেম্বর এই মহান অভিনেতা
পরলোক গমন করেন।